# এক মুঠো রোদ .
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্বঃ শেষ পর্ব
৮৮.
ল্যাপটপে চোখ রেখে স্থির বসে আছে রাফিন। হাতের আঙ্গুলগুলো অত্যন্ত ব্যস্ত ভঙ্গিতে নৃত্য করে চলেছে কি-বোর্ডের কালো বোতামে। কপাল হালকা কুঁচকানো। চোখ-মুখের থমথমে ভাব দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভীষণ দরকারী কাজ করছে সে। রাফিনের এই ব্যস্ততার মাঝেই সামনে এসে দাঁড়ালো আরু। প্রায় দশ মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকেও “টু” শব্দটা পর্যন্ত করলো না। শেষমেষ বিরক্ত হয়ে নিজেই মুখ খুললো রাফিন,
—” কি সমস্যা? কিছু বলবে?”
আরু মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো,
—” মুভি দেখবো।”
রাফিন ল্যাপটপে চোখ রেখেই বললো,
—” তো দেখো। এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
আরু হঠাৎই রাফিনের পাশে গিয়ে বসলো। ল্যাপটপটা টেনে নিয়ে বললো,
—” আমি ল্যাপটপে মুভি দেখবো।”
রাফিনের বিরক্তি যেন আকাশ ছুঁলো। বিরক্তি নিয়ে বললো,
—” আশ্চর্য! এসব কোন ধরনের বাচ্চামো আরু? আমি কাজ করছি। “
আরু মুখ কালো করে বললো,
—” বললাম তো মুভি দেখবো।”
রাফিন নিজের রাগটাকে ধামাচাপা দিয়ে বললো,
—” মুভি দেখবে টিভিতে দেখো না রে বাবা। বাড়িতে কি টিভি কম আছে?”
আরু জবাব না দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। আরুকে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস ফেললো রাফিন। ডক্টর হিসেবে আরুর মুড সুয়িং এর ব্যাপারটা খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করছে সে। এই সময় অযথা ঝামেলা করে যে কোনো লাভ নেই তাও বেশ বুঝতে পারছে রাফিন। তাই নিজের রাগ আর বিরক্তিকে পাশে ফেলে মৃদু হেসে বললো,
—” আচ্ছা, দেখো মুভি।”
রাফিনের অনুমতি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে মুভি সিলেক্ট করতে মনোযোগ দিলো আরু। রাফিন এক হাতে কপাল চেপে ধরে চুপচাপ বসে আছে। বউই যদি এতো জ্বালায় তাহলে বাচ্চা এসে যে কি করবে আল্লাহ মালুম। জীবনে বিয়ে নামক ঝামেলায় জড়ানোর কোনো ইচ্ছে ছিলো না রাফিনের। তবুও জড়িয়েছে। পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বউয়ের প্রেমেও পড়েছে। এ পর্যন্ত সব ঠিক থাকলেও, বাচ্চা? এসব বাচ্চা নামক ঝামেলার কথা ইহকালেও কল্পনা করে নি রাফিন। রাগে, দুঃখে শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে রাফিনের কিন্তু কি-ই বা করতে পারে সে? আরুকে তো দোষ দেওয়া যায় না। সব দোষ তো নিতান্তই তার। নিজেকে সংযত না রাখতে পারার ফলাফল হিসেবে এতোবড় ভুল আর সেই ফলাফলের রেশ ধরেই এই বাচ্চা। কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরুর দিকে তাকালো রাফিন। আরুর আঁধার করে রাখা মুখটির দিকে তাকিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
—” আরু? কি হয়েছে জানু? মন খারাপ নাকি শরীর খারাপ? সিক ফিল করছো?”
আরু মুখটাকে আরো একটু অন্ধকার করে রাফিনের দিকে তাকালো। মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো,
—” আরিয়ান মৃন্ময়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।”
রাফিন কপাল কুঁচকে তাকালো। উঁকি দিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই দেখলো ইউটিউবে মৃন্ময়-রোজার এনগেজমেন্টের প্রোগ্রাম চলছে। ল্যাপটপ স্ক্রিন থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে থমথমে গলায় বলে উঠলো রাফিন,
—” ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, হোক। তাতে তুমি কাঁদছো কেন?”
আরু ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,
—” মাই ক্রাশ! আমার কেমন দুঃখ দুঃখ লাগছে। হি ইজ সো কিউট। কি মিষ্টি করে হাসে। কত্তো সুন্দর করে কথা বলে। এভাবে হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে যাওয়াটা কি মানায়? এটা তো রীতিমতো অন্যায়।”
আরুর আহাজারিতে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো রাফিনের। সে কি মৃন্ময়ের থেকে কম নাকি? পাশে হ্যান্ডসাম হাজবেন্ড রেখে বউ তার অন্য ছেলের বিয়ে হয়ে যাওয়ার দুঃখে কাঁদছে ভাবতেই মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে তার।
—” তো? আমাকে বিয়ে করে মন ভরে নি? এখন কি ওকেও বিয়ে করতে চাও?”
আরু কাঁদো কাঁদো চাহনি নিয়ে বললো,
—” আমি কি বলেছি বিয়ে করবো?”
—” তাহলে কাঁদছো কেন?”
—” যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন থেকে উনার ওপর ফিদা আমি। সাত সাতটা বছর ধরে ক্রাশ খেয়ে আসছি। সেই ক্রাশ অন্যজনের কোমর জড়িয়ে ধরে বিয়ে করতে যাচ্ছে, আমার কষ্ট হবে না?”
রাফিন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। রাগে রি রি করতে করতে বললো,
—” সেই! তোমাদের তো একটাতে পেট ভরে না। জামাই চায়, ক্রাশও চায় আর কিছু চায় না? তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, মৃন্ময়ের উচিত বিয়ে সাদী না করে চিরকুমার থেকে যাওয়া। তাই না?”
আরু মাথা দুলাল। রাফিন বিরবির করে বললো, “ডাফার!” কিছুক্ষণ চুপ থেকে ল্যাপটপটা টেনে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো রাফিন,
—” লেহেঙ্গায় কিন্তু বেশ মানিয়েছে রোজাকে। তোমার প্রাণপ্রিয় মৃন্ময় চিরকুমার থাকলে খারাপ হয় না। আমাদের রোজাটা বেঁচে যায় আরকি।”
রাফিনের কথায় ফুঁসে উঠলো আরু। ল্যাপটপটা ঠাস করে বন্ধ করে দিয়ে বলে উঠলো,
—” বউ রেখে পরনারীর দিকে নজর দেন, ছি। লুচু লোক।”
রাফিন বাঁকা হেসে বললো,
—” এখন আমি লুচু? হলে হলাম লুচু কিন্তু তুৃমি এতো চেঁতছো কেন? জ্বলে বুঝি?”
আরু জবাব দিলো না। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে রাফিনের কাঁধে মাথা রাখলো। রাফিনও আদরমাখা হাতে জড়িয়ে নিলো তাকে। আরু মৃদু গলায় বললো,
—” আচ্ছা? ভাইয়াকে যে মামা-মামির কথা বলেছিলেন। আপনার মামা-মামি কোথায়?”
রাফিনের স্পষ্ট উত্তর,
—” মামা তিনবছর আগে মারা গেছেন। আর মামি বৃদ্ধাশ্রমে।”
রাফিনের কথাটা কানে যেতেই তড়িৎ বেগে সোজা হয়ে বসলো আরু। বিস্ময় নিয়ে বললো,
—” আপনার এতো বড় বাড়ি থাকতে উনি বৃদ্ধাশ্রমে কেন? উনাকে আপনি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে পারলেন?”
রাফিন কপাল কুঁচকে বললো,
—” আমি রেখে আসতে যাবো কেন? উনি নিজেই বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে চেয়েছেন। উনার ইচ্ছে পূরণ করতেই বৃদ্ধাশ্রম বানিয়ে দিয়েছি। উনি ওখানে খুশি থাকলে আমার তো কোনো সমস্যা নেই।”
—” মানে?”
রাফিন খানিকটা নড়েচড়ে বসে বললো,
—” মানেটা সিম্পল। মামা মারা যাওয়ার পর থেকেই নিজেকে খুব একা ফিল করতে থাকে মামি। আমিও সবসময় ব্যস্ত থাকি। তো একদিন এসে বললেন, বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে চান। ওখানে উনার বয়সী অনেকেই থাকবেন। কথা বলার মানুষও পাবেন। মামির কথা তো আর ফেলতে পারি না আর না পারি শহরের যেকোনো একটা থার্ডক্লাস বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে। তাই মামির নামেই একটা বৃদ্ধাশ্রম বানালাম। নিঃসন্তান বলে ছোট বাচ্চাদের উপর উনার দুর্বলতাটা প্রচুর তাই বৃদ্ধাশ্রমের পাশে এতিমখানাও বানিয়ে দিলাম। বুড়োবুড়ি আর বাচ্চাদের নিয়ে মামি হাসি-খুশিই সময় কাটাচ্ছেন। উনার জন্যই এসব বৃদ্ধাশ্রম আর এতিমখানা। নয়তো এসব ফাউল জিনিসে টাকা ঢালা আমার কর্ম নয়। ভাবছি মামিকে এবার ফিরতে বলবো। তোমার আর বেবির দোহাই দিয়ে মামি ফিরে আসলেও আসতে পারে। না আসলেও সমস্যা নেই। যেখানে থাকার থাকুক, আমার কি?”
আরু ভ্রু কুঁচকে তাকালো,
—” এতো খারাপ কেন আপনি? একটু ভালো হওয়া যায় না?”
রাফিন হেসে ফেললো। আরুকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
—” না যায় না।”
পুরনো সেই বন্য উন্মাদনায় আবারও মত্ত হলো রাফিন। নিজেকে ছাড়ানোর শেষ চেষ্টাটা ব্যর্থ হতেই চোখ বুজে নিলো আরু। থেমে গেলো সময়। নিভে গেলো আলো। রাফিনের সাথে পেরে উঠাটা কখনোই হয়ে উঠে না আরুর। তবে একদিন হয়তো পেরে উঠবে সে। আরুর মায়া মাখানো রোদের ঝিলিকে ঝলকে উঠবে রাফিনের অন্ধকারাচ্ছন্ন চোখ। আরুর ভালোবাসাময় এক মুঠো রোদের আলো ছড়িয়ে পড়বে আকাশের প্রতিটি কোণায়। দীর্ঘ রজনীর ঘন অন্ধকার কাটিয়ে আলো ফুটবে । ভোর হবে। জন্ম নিবে নতুন রাফিন। রোদের তাপে পুড়ে যাবে সব হিংস্রতা। ভালোবাসায় রাঙা হবে নতুন রংমহল। সেই দিনটির জন্যই অপেক্ষা আরুর। তারজন্যই শ্বাসরুদ্ধকর এই প্রত্যাশা । কবে আসবে সেই দিন? কবে মুক্ত হবে হাতে বন্ধী সেই “এক মুঠো রোদ”?
_________________
রাত প্রায় ২ টা। চারদিকে হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস। মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে ঝলমলে তারা। ঢাকা থেকে খানিকটা দূরে একটা নিস্তব্ধ ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে আছে রোজা-মৃন্ময়। রোজার গায়ে হালকা নীল রঙের কামিজ আর সাদা রঙের সালোয়ার। গলায় ঝুলানো সাদা ঝর্ঝেট ওড়না। পিঠটা ঢেকে আছে লম্বা খোলা চুলে৷ মৃন্ময়ের গায়ে কালো টি-শার্ট, কালো টাওজার আর পায়ে বাসায় পড়া স্লিপার। রোজা ব্রিজের রেলিঙে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে উড়ে আসা চুলগুলো বামহাতে সরিয়ে দিতেই অন্ধকারে চিকচিক করে উঠছে অনামিকা আঙ্গুলের আংটিটা। মৃন্ময় পকেটে হাত ঢুকিয়ে চুপচাপ রোজার দিকে তাকিয়ে আছে। এই অন্ধকারে যতটুকু দেখা যায় ততটুকুতেই দেখার শেষ নেই তার। দীর্ঘ সময়ের বাক্যহীন নীরবতা কাটিয়ে কথা বলে উঠলো মৃন্ময়,
—” ম্যাডাম কি এখনো রেগে আছেন?”
রোজা উত্তর দিলো না। মৃন্ময় হেসে রোজার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো। ডান হাতটা পকেট থেকে বের করে লম্বা চুলগুলো একপাশ করে রাখতেই নড়ে উঠলো রোজা। মৃন্ময় থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই হেসে রোজাকে আরেকটু কাছে টেনে নিলো মৃন্ময়। পকেট থেকে বকুল ফুলের মালা বের করে লম্বা চুলগুলোতে জড়াতে লাগলো সে। রোজা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। রোজাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মৃদু হাসলো মৃন্ময়। ফিসফিস করে বললো,
—” রাগলে মায়াবতীদের আরো বেশি মায়াবতী লাগে রোজা। আর আমার মায়াবতীটাকে তো এমনিই চোখে হারাই আমি। তাকে রেখে অন্যকাউকে দেখার সময় আছে নাকি আমার?”
রোজা কিছু বললো না। চুলে মালা জড়ানো শেষ করে দু’হাতে রোজার কোমর জড়িয়ে ধরলো মৃন্ময়। রোজাকে মুখোমুখো দাঁড় করিয়ে ফু দিয়ে মুখে পড়ে থাকা চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে বললো,
—” রাগ কমেছে?”
রোজা মুখ ফুলিয়ে বললো,
—” আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না। সব মেয়েরা কেমন “হা” করে তাকিয়ে থাকে। রাগ লাগে আমার।”
মৃন্ময় হেসে বললো,
—” আচ্ছা।”
রোজা রেগে বললো,
—” কি আচ্ছা? “
—” এইযে বিয়ে করবেন না বললেন তাই বললাম আচ্ছা।”
রোজা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
—” তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে আছি কেন আমি?ছাড়ুন আমায়। এক্ষুনি চলে যাবো আমি। ছাড়ুন….”
মৃন্ময় স্মিত হেসে বললো,
—” ছাড়তে মন চায় না তো। একটা মাত্র বউ আমার কি করে ছাড়ি বলুন?”
—” কিসের বউ? বললাম না বিয়ে করবো না।”
—” আপনি বিয়ে করবেন না তাতে কি? আমার বউ তো করবে। আপনি আমায় ভালো না বাসলেও আমার বউ কিন্তু অনেক ভালোবাসে আমায়। আপনি যেতে চাইলে যেতে পারেন কিন্তু বউকে ছাড়া যাচ্ছে না। সে আমার শীতল, মেরুময় জীবনে এক মুঠো উত্তাপ। এক মুঠো রোদ সে। আমার স্তব্ধ জীবনের অপরিসীম চঞ্চলতা সে। তার জন্য এই দুনিয়া ছেড়ে দেওয়া গেলেও এই দুনিয়ার জন্য তাকে ছাড়া চলবে না। কিছুতেই না।”
রোজা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সন্দেহী গলায় বললো,
—” আপনি কি আমায় কনভেন্স করার চেষ্টা করছেন?”
মৃন্ময় হেসে ফেললো। হাতের বাঁধন আরো খানিকটা শক্ত করে বললো,
—” উহুম। আদর করার চেষ্টা করছি।”
মৃন্ময়ের বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,
—” আবার শুরু করেছেন আপনি? অসভ্য লোক। ছাড়ুন বলছি।”
—” ছাড়তে বললেই ছাড়া যায় নাকি? প্রথম দিন কি বলেছিলে মনে আছে? নায়করা নাকি অলওয়েজ জড়াজড়ি…চুম্মাচুম্মি করে। সো জড়াজড়ি তো হলো এবার তাহলে চু…”
এটুকু বলতেই মুখ চেপে ধরলো রোজা। লজ্জায় লাল হয়ে বললো,
—” ছি! নির্লজ্জ।”
রোজার হাতে হালকা কামড় দিয়েই নিঃশব্দে হাসতে লাগলো মৃন্ময়। মৃন্ময়ের হাসিমাখা মুখটা চোখে পড়তেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো রোজা। নিজেকে কোনোরকম ছাড়িয়ে নিয়েই রাস্তা ধরে হাঁটা দিলো সে। মৃন্ময় হাসতে হাসতেই পিছু নিলো তার। বর্ষার আকাশের মতি বুঝা বড় দায়। হুট করেই গুড়িগুড়ি শব্দ তুলে গর্জে উঠলো মেঘ। রোজা খানিক থেমে আকাশের দিকে তাকালো। মৃন্ময় পেছন থেকে হাত টেনে ধরে বললো,
—” আমাদের ফিরতে হবে রোজা। আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। সেদিন ভিজেছো আজ ভিজলে নির্ঘাত জ্বরে পড়বে। চলো…”
কথাটা শেষ করে হুট করেই রোজাকে কোলে তুলে নিলো মৃন্ময়। রোজা চোখ বড় বড় করে বললো,
—” পাগল নাকি? নামান প্লিজ। আমার ওজন পঞ্চাশ কেজি তো হবেই। কোমরে চোট লাগবে আপনার। নামান…”
—” ইশ! চুপ করো না রে বাবা। পাহাড়ের বন্ধুর পথে কোলে নিয়ে হাঁটতে পারলে এই শহুরে রাস্তায় কোলে নেওয়াটা কোনো ব্যাপারই না।”
মৃন্ময়ের কথার পিঠে কথা বাড়ালো না রোজা। দু’হাতে বেশ আয়েশ করে মৃন্ময়ের গলা জড়িয়ে ধরে মৃন্ময়ের অন্ধকারে ঢাকা মুখটির দিকে তাকালো। মৃন্ময়ের চোখ-মুখের তৃপ্তির ছোয়া। আজই প্রথম রাস্তার মোড় থেকে নিজের হাতে বকুলের মালা কিনেছে সে। আজই প্রথম প্রেয়শীর মান ভাঙাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছে সে। আজই প্রথম মাঝরাতে জানালা ভেদ করে কোনো মেয়েকে তুলে এনেছে সে। যদিও তাতে তীর্থর সাহায্যটাই মূল ছিলো তবুও তার জীবনে তো প্রথম! আজই প্রথম ভালোবাসার মানুষটিকে বুকে জড়িয়ে নিঃসংকোচে হেঁটে চলেছে সে। জীবনে প্রথম করা জিনিসগুলোর সাথে আতঙ্ক আর কৌতূহল মিশে থাকে। কিন্তু মৃন্ময় দ্বিধাহীন,নির্ব
ীক। এই প্রথম হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে করছে তার। রোজাকে এভাবে বুকের সাথে মিশিয়েই কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে যুগের পর যুগ।
“ভালোবাসা” নামক শব্দটায় অদ্ভুত এক শক্তি থাকে। থাকে এক সঞ্জিবনী শক্তি। সে শক্তি যেমন মুহূর্তেই আলোকিত করতে পারে কারো জীবন ঠিক তেমনি অন্ধকারাচ্ছন্নও করতে পারে। চারটি জীবন আজ একে অপরের সাথে সূক্ষ্ম সুতোয় গাঁথা। জীবনের টালমাটালে তাদের হারতে হবে, জিততে হবে। একসাথে লড়তে হবে। হয়তো একদিন ভালোবাসা নামক অনুভূতিটি “এক মুঠো রোদ” হয়ে নেমে আসবে তাদের বুকে। আলোকিত করবে কারো জীবন নয়তো দূর করবে কারো নির্জীবতা।
_________________সমাপ্ত ________