রোদ শুভ্রর প্রেমকথন পর্ব ৫৪
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা
জী-ব-ন! সবার জীবনেই একটা গল্প থাকে। কারো গল্প সুপ্ত, লুকায়িত। কারো গল্প ধ্রুবতারার মতো প্রকাশিত। খন্ড-বিখন্ড। ছড়ানো। আমার জীবনের গল্পটাও তাদেরই একটি। খন্ড-বিখন্ড। ছড়ানো-ছিটানো। হাজারখানেক চোখে এক কাল্পনিক বিস্ময়! সেই গল্পের প্রতিটি পাতায় পাতায় হাসি, আনন্দ আর আকাশসম আবদার। কিন্তু শুধু আনন্দ দিয়ে কী গল্প হয়? জীবন নামক উপন্যাসে এতো আনন্দ, এতো হাসি সহ্য হওয়ার তো কথা নয়? তাহলে আমার বেলা উল্টো কেন? প্রকৃতি বুঝি হেসেছিল।
সেই হাসিতেই উল্টে গেল ডায়েরির পাতা। নীল থেকে গাঢ় নীল হয়ে এলো প্রতিটি অক্ষর। বছরের পর বছর হাসির ভেলায় ভাসতে ভাসতে বিচ্ছেদ, পরাজয়ের সমুদ্রে নোঙর ফেললাম স্ব-ইচ্ছায়। হাসির গল্পগুলো আড়াল হতে লাগল ডায়েরির সেই বন্ধ কোটরে। আমি চেয়ে দেখলাম। মৃদু হাসলাম। তারপরই হারিয়ে ফেললাম রঙ। জীবনরঙা রঙিন রঙ!
‘রোদ-শুভ্রর’ নিজস্ব গল্পটা যখন আনন্দের নদী পেরিয়ে গাঢ় বিষাদের সমুদ্রে নোঙর ফেলল তখন আগষ্ট মাস। গোটা বাংলায় শরৎ এর আমেজ। আকাশে পেঁজা মেঘের ভেলা। হিমঝুরি, শেফালি, শিউলিতে ভরে আছে সদ্য ভেজা উঠোন। কবিরা বুঝি গাইছিলেন উন্মাদনার গান। অবাধ্যতার ছন্দ!
”অসীম নীলে মাতাল অনিলে মেঘের তুলো ভাসে!
সবুজ দিগন্ত বন-বনান্ত প্রাণ খুলে হাসে!”
আমিও প্রাণখুলে অবাধ্য হয়ে উঠলাম তখন। চঞ্চল হয়ে উঠল মন। পড়াশোনা ছেঁড়ে-ছুঁড়ে সাময়িক আনন্দে গা ভাসালাম। যৌবনের প্রথম প্রহর, কারো বাঁধা শোনার সময় নেই। চারদিকে রঙিন শহর। রঙিন আমি’র, রঙিন স্বপ্ন। সে যায় হোক, তখন বোধহয় আগষ্টের বিশ কিংবা পঁচিশ তারিখ চলছে। বাড়িতে কেমন সাজ সাজ রব। কাজিনরা সব মামা বাড়ি ঘুরতে এসেছে।
মিথি আপু মা হতে চলেছে, চারদিকে সেকি হৈ-হুল্লোড়। আমাদের কাজিন সমাজে তখন এই প্রথম বাচ্চা! আমরা সব একসাথে চাচা-মামা-খালা-ফুপু হয়ে যাব, চিন্তা করা যায়? আমার পড়াশোনা এবার লাটে উঠল। আলিফ ভাই, অদুত ভাই, মিলাদ ভাই, মিথি আপু, তনিমা আপু, চয়ন ভাইয়া, রুহি আপু, রুদ্র ভাই, রাফিয়া, জারিফ, আদিবা… উফফ! এতোগুলো মানুষ একসাথে হৈচৈ করছে। আনন্দ করছে। আর আমি বইয়ের পাতায় মুখ ডুবিয়ে বসে থাকব? অসম্ভব! এক্কেবারে অসম্ভব।
কিন্তু আড্ডার মধ্যমণি, শুভ্র ভাই আপত্তি তুললেন। তার আমাকে নিয়ে বিশাল সমস্যা। তিনি কোনোভাবেই আমায় আড্ডায় বসতে দিবেন না। আড্ডায় বসতে হলে বিশের ঘর ছুঁতে হবে। দলভেদে গরম গরম গল্প চলবে। আমাদের মতো শিশুদের নিয়ে পান্তাভাত গল্প চলবে না। সুতরাং নট এলাউড। আমি আর রাফিয়া অসহায় চোখে চাইলাম। মুখ ফুলিয়ে বললাম,
‘ আমার বয়স উনিশ বছর সাত মাস সতেরো দিন। অলমোস্ট টোয়েন্টি। চার মাস পর তো বিশ হয়েই যাব। চার মাসের জন্য কী এমন হলো?’
শুভ্র ভাই তীক্ষ্ণ চোখে তাকালেন। গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ বিশ বছর পূর্ণ হওয়ার এক সেকেন্ড আগেও যেখানে আড্ডায় নেওয়া যাবে না। সেখানে তুই চারমাস তেরো দিনকে মাত্র বলে ফেললি? চার মাস তেরো দিন মানে বুঝিস তুই? চারমাস তেরো দিন মানে হলো, এগারো কোটি চার লক্ষ একানব্বই হাজার দুইশো সেকেন্ড! আমি একজন দায়িত্ববান নাগরিক হয়ে এসব দূর্নীতি বরদাস্ত করব না। ফুট! ‘
আমি হতাশ হলাম। মুখ ফুলিয়ে বললাম,
‘ কী এমন গল্প করবেন যে বিশ বছর না হলে শোনা যাবে না? আমি এক্ষুনি আম্মুকে গিয়ে বলব আপনারা ছাদে বসে অশ্লীল গল্প করছেন।’
আমার কথায় শুভ্র ভাইয়ের কোনো ভাবান্তর হলো না। তিনি ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,
‘ বল গে যা। মানা করেছে কে? তোর বাপকেও বলিস। আমরাও বলব তুই এইসব অশ্লীল গল্প শোনার জন্যই মরে যাচ্ছিস!’
আমি চোখ বড় বড় করে চাইলাম। আমি অশ্লীল গল্প শোনার জন্য মরে যাচ্ছি? আমি! আমি চোখ-মুখ লাল করে চুপ করে বসে রইলাম। এই লোকের সাথে তর্কে জড়ানো মানেই যন্ত্রণা। চড়-থাপ্পড় খাওয়ার সমূহ সম্ভবনা। আমাদের এমন আঠার মতো চিপকে বসে থাকতে দেখে হা-হুতাশ করে উঠলেন আলিফ ভাই। অধৈর্য হয়ে বললেন,
‘ উফ! এমনে আঠার মতো বসিস আছিস কেন? যা না? আমার এই মুহূর্তে একটা কথা মনে পড়েছে। ভেরি ইম্পোর্টেন্ট। পেট ফেঁটে যাচ্ছে, না বললে শান্তি পাচ্ছি না। তোদের সামনে বলা যাবে না। যা ফুট! ভাইদের আড্ডায় তোদের কী কাজ?’
আলিফ ভাইয়ের অধৈর্য বার্তা শুনে আগ্রহ নামক প্রজাপতিটা আকাশে বাতাসে দুলতে লাগল। ‘না বলে শান্তি পাচ্ছি না’, টাইপ কথাটা না শুনেই উঠে যাওয়াটা একরকম অসম্ভব হয়ে গেল। মাথার টু-জি স্পিডের মস্তিষ্কটা ছুটতে লাগল দ্রুত। রাফিয়া নাছোড়বান্দার মতো বলল,
‘ এটা ভাইদের আড্ডা হলে রুহি আপু, তনিমা আপু, মিথি আপু, আদিবা ওরা এখানে কেন? ওরা বুঝি বোন না? তোমরা সবসময় আমাদের সাথে শত্রুতা করো। এটা কিন্তু ঠিক না।’
রুদ্র ভাই খেঁক করে উঠে বলল,
‘ মারবো এক চড়। তোর না পরীক্ষা? যা গিয়ে পড়তে বস। নয়তো আম্মাকে ডেকে বলব তুই এখানে বসে ঢং করছিস। ঢঙী মাইয়া।’
রাফিয়া ফুঁসে উঠে বলল,
‘ আসছে আম্মার চামচা। যা গিয়ে বল। আমিও আব্বাকে বলব, তুই আব্বার পকেট থেকে টাকা সরিয়ে মেয়ে নিয়ে জয়নুল আবেদীন যাস। আমি দেখেছি।’
রুদ্র ভাই থমকে গেল। বোনের আসন্ন বিজয়ে কালো হয়ে গেল মুখ। রুদ্র ভাইয়ের ফ্যাকাশে মুখ দেখে হুহা করে হেসে উঠল সবাই। আলিফ ভাই বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকাল। রাফিয়ার দিকে ঝুঁকে ভীষণ খুশি খুশি কন্ঠে বলল,
‘ এই রাফু? মেয়েটা কে রে? নতুন নাকি এক্সপায়ার্ড?’
আলিফ ভাইয়ের আগ্রহ দেখে খুশিতে ঝুমঝুম করে উঠল রাফিয়া। আড্ডায় ডুকে যাওয়ার সমূহ সম্ভবনায় ঝলমল করে উঠল মুখ। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। রাফিয়া কিছু বলার আগেই সর্বশেষ যুদ্ধ চুক্তি ছুঁড়ে দিলেন শুভ্র ভাই। গম্ভীরমুখে বললেন,
‘ মেয়েটা কে ছিল তা নিয়ে আমাদের আগ্রহ নেই। রোদু দ্য ছকিনার মা এখানে থাকলে কোনো কিছুতেই আগ্রহ আমাদের থাকবে না। হাঁটুর বয়সের কাউকে আমরা আড্ডা ফাড্ডায় নিব না। রোদু থাকলে আমি থাকব না। আড্ডা সমাপ্ত।’
শুভ্র ভাইয়ের ঘোষণায় পুরো কাজিন গ্যাং-এ এক রকম হৈ হৈ পড়ে গেল। সবাই চোখ বড় বড় করে আমার আর রাফিয়ার দিকে তাকাল। ভাবখানা এই, শুভ্র ভাই দ্য গ্রেট ছাড়া আড্ডা জমা অসম্ভব। দরকার পড়লে দশখানা রোদকে বনবাস দাও তবু শুভ্র দ্য গ্রেটকে প্রশংসিত করো। মীরজাফর ভাই-বোন। আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
‘ খবরদার আমায় ছকিনার মা বলবেন না!’
শুভ্র ভাই যেন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। একরকম বাক্যহারা হয়ে বললেন,
‘ তুই আমাকে ধমক দিস! আমাকে? কত বড় বেয়াদব? তোর মতো বেয়াদবের জন্যই দেশটা এমন রসাতলে যাচ্ছে। বড়দের প্রতি কোনো রেস্পেক্ট নেই? তোর যে হাঁটুর সাইজের বয়স। তোর তো উঠতে বসতে আমায় সালাম দেওয়া উচিত। বল, আসসালামু আলাইকুম।’
আমি চোখ-মুখ ফুলিয়ে চুপ করে বসে রইলাম। আলিফ ভাই অসহায় কন্ঠে বললেন,
‘ যা না রে বইন। তোরা বইন হয়ে এমনে প্যারা দিলে তোদের বান্ধবীগুলা কী করব? তোর বান্ধবীগুলো সুন্দর আছে। সবগুলোই কী তোর মতো এমন গরম আলো? নাকি আছে কিছু গিলু?’
আমি চোখ-মুখ লাল করে তাকালাম। জেদ ধরে বললাম,
‘ আমি যাব না।’
শুভ্র ভাই প্রচ্ছন্ন ধমকি দিয়ে বললেন,
‘ যাবি না? বেশ, যাস না। বসে থাক। আলো-বাতাস খা। ফুপ্পি সেদিন তোকে পড়ানোর কথা বলছিলেন। সি ইউ এট দ্য পড়ার টেবিল। এরপর আলো-বাতাস খাওয়ার সুযোগ তুই পাবি না।’
আমার মুখটা ফাঁটা বেলুনের মতো চুপসে গেল। শুভ্র ভাই দূর্দান্ত অসভ্য মানুষ। তার ‘সি ইউ’ মানেই মাসুম জানখানি হাতে নিয়ে পড়তে বসা। আম্মুর কাছে আকাশ সমান নালিশ আর এই বয়সে এসেও দুই একটা চপেটাঘাত। মানসম্মানের নির্মম বলি। আমি অসহায় চোখে চাইলাম। তারপর বেশ চোটপাট দেখিয়ে নেমে এলাম নিচে। রাফিয়াও মুখ কালো করে নেমে এলো পিছু পিছু। সিঁড়ির গোঁড়ায় আসতেই ইচ্ছে করেই গা জ্বালানো এক গান ধরলেন শুভ্র ভাই। তার ঝরঝরে খোলা কন্ঠে গমগম করে উঠল চারপাশ,
“দেখো, এত রাগ ভালো নয়,
রাগলে তোমাকে লাগে ভয়,
আমি কাছে আর আসবো না
তোমায় ভালো আর বাসবো না
কথায় কথায় তুমি কেন এত জ্বলে যাও?
ও সাথী আমার
তুমি কেন চলে যাও?
কি দোষ করেছি,
এ কথা বলে যাও…
ও সাথী আমার
তুমি কেন চলে যাও….”
উনার লিরিক্সের ঢং দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার। চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে দিয়ে আমার চলে যাওয়ার কারণ জানাতে ইচ্ছে করল। মেজাজের বারো বারো চব্বিশটা বাজিয়ে সিঁড়ি পেরুতেই আবারও মূর্তমান এক মেজাজ খারাপ সামনে এসে দাঁড়াল। আমি ভদ্রতার অতিশয্যে ভেসে গিয়ে শুধালাম,
‘ আরে শুশ্মিতা আপু?কেমন আছেন?’
শুশ্মিতা আপু হাসলেন। খয়েরী শাড়িতে ঝলমল করে উঠল হাস্যোজ্জ্বল মুখ। অদ্ভুত এক মন খারাপ নিয়ে আমি দেখলাম, তাকে সুন্দর লাগছে। ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছে। শুশ্মিতা আপু অনেকটা ফিসফিস করে বললেন,
‘ আজকের দাওয়াতে শুভ্র ভাইয়ার পরিবার আসেনি রোদ? দেখছি না যে?’
কথাটা বলেই শাড়ির গায়ের মতো লজ্জায় টুকটুকে লাল হয়ে গেল উনার গাল। উনার লজ্জার বহর দেখে ভেতরটা জ্বলে উঠল আমার। রাগ হলো। শুভ্র ভাইয়ের কথাটা এড়িয়ে গিয়ে ঠোঁটে হাসি নিয়ে বললাম,
‘ এসেছে। মামানি রান্নাঘরে আছে।’
রাফিয়া সবসময়ই সতী সাবিত্রী। চলতে ফিরতে টেপ রেকর্ডার। সবাইকে খুঁজে খুঁজে খবর বিলানো তার মহান থেকে মহানতম দায়িত্ব। এবারও তাই হলো। আমার মুখের কথাটা লুফে নিয়ে একদম সর্বজান্তার মতো বলে ফেলল,
‘ ধূর! মামানি তো বাহানা! শুশ্মি আপু তো জানতে চাইছেন শুভ্র ভাইয়ার কথা। ঠিক বলেছি না আপু? হু? হু?’
শুশ্মিতা আপু লাজুক হাসলেন। আমি রাগে চুরমার হয়ে কটমট চোখে রাফিয়ার দিকে চাইলাম। রাফিয়া গর্বিত রমনীর মতো ঘোষণা করল,
‘ শুভ্র ভাইয়াসহ সবাই ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। আপনার বয়স যদি বিশ হয়ে থাকে তাহলে ডিরেক্ট ছাদে চলে যান। আমি আর রোদ পারমিশন পাইনি। আমরা হলাম রিজেক্টেড পিস।’
শুশ্মিতা আপু হেসে ফেললেন। মিষ্টি একটা হাসি নিয়েই বললেন,
‘ বেশ! তাহলে তো বিশ বছর পেরিয়ে যাওয়ার সৎ ব্যবহারটা করে ফেলতে হয়!’
শুশ্মিতা আপু সরে যেতেই রাফিয়ার পিঠে ধুম করে কিল বসালাম আমি। রাগে ফেঁটে পড়ে বললাম,
‘ বেয়াদব মহিলা! তোকে এতো আগ বাড়িয়ে শুভ্র ভাই শুভ্র ভাই করতে কে বলেছে? অসভ্য মেয়ে কোথাকার। তুই জানিস না উনার গার্লফ্রেন্ড আছে?’
রাফিয়া অত্যন্ত দুঃখী কন্ঠে বলল,
‘ শুভ্র ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ডের কথা মনে পড়েই দুঃখে প্রাণটা ফেঁটে যাচ্ছে তারওপর তুই মারছিস? কী এমন করেছি আমি? তুই সবসময় আমার সাথে এমন করিস।’
একটু থেমে আবারও ব্যথিত মনে শুধাল,
‘ আমার ক্রাশের সাথেই সব মেয়েরা এমন মাছির মতো ভন ভন করে কেন বল তো? আমার ক্রাশগুলো সারাজীবন চিরকুমার থাকলে কী হয়?’
আমি ফুলে ফেঁপে তাকালাম। এই অত্যন্ত বাচাল মেয়েটিকে ঠাটিয়ে দুটো চড় লাগানোর ইচ্ছেকে প্রশ্রয় না দিয়ে পা টিপে টিপে ছাদের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিতেই মেজাজটা চব্বিশ চব্বিশে আটচল্লিশ হয়ে গেল। রাগে-দুঃখে স্তব্ধ হয়ে গেল মন। শুশ্মিতা আপুকে শুভ্র ভাইয়ের পাশে বসে থাকতে দেখে একরকম আর্তনাদ করে উঠল রাফিয়া। আমার দুঃখকে ছাপিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,
‘ আমি বোধহয় আর বেশিদিন বাঁচব না রে রোদু। ক্রাশকে অন্য মেয়ের পাশে দেখে বুকটা কেমন দরফর দরফর করছে। ইয়া আল্লাহ! আমার ক্রাশটাকে এবারের মতো চিরকুমার রেখে দাও না প্লিজ? আমি মসজিদে পঞ্চাশে পঞ্চাশে একশো টাকা দিব। দোয়া কবুল করো, আমিন।’
তারপর আমার দিকে চেয়ে বলল,
‘ কী রে? বল, আমিন।’
আমি রাফিয়ার দিকে শান্ত চোখে তাকালাম। তার সুন্দর গালদুটোতে দু’দুটো চড় লাগিয়ে বলতে ইচ্ছে করল,’ হ্যাঁ। তাই তো! থাকাচ্ছি তাকে চিরকুমার! বেয়াদবের হাড্ডি একটা। মেয়ে দেখলে দেহে প্রাণ থাকে না। আবার আমায় বেয়াদব বলে। ব্যাটা অসহ্য।’ কিন্তু বলা হলো না। উল্টো অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয় নিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিলাম। তার থেকেও ব্যথিত মন নিয়ে যখন আমরা নিচে নামলাম তখন আমাদের দুজনের মুখই বাংলার পাঁচ। মনের মাঝে দগদগ করছে আকাশসম অভিমান। রাফিয়ার অবস্থা যেন আমার থেকেও বিধ্বস্ত। সে বয়ফ্রেন্ডের ফোন টোন রিসিভ করছে না। তার মন খারাপ, সে এখন দুঃখ যাপন করবে। পার্থিব প্রেম ভালোবাসা দুঃখ যাপনে নিষিদ্ধ। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। প্রায় সাথে সাথেই পেছন থেকে ডেকে উঠল কেউ,
‘ এই পিচ্চি! কেমন আছো?’
আমি ঘাড় ফিরিয়ে তাকালাম। মিথি আপুর প্রেগনেন্সি উপলক্ষে আমাদের বাসায় আজ বিশাল দাওয়াত। আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিয়ে দূর্দান্ত এক সন্ধ্যা কাটানোর ইচ্ছে। সেই দাওয়াত রক্ষার্থেই পরিবার নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন নাহিদ ভাইয়া। আমি ভদ্রতার হাসি হাসলাম,
‘ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?’
‘ বেশ ভালো।’
পাশ থেকে নাঈম ভাইয়া বললেন,
‘ এই রোদ? তোমাদের বাকি গ্যাং কোথায়? দেখছি না যে? কেউ আসেনি?’
রাফিয়া আকাশ সমান দুঃখ নিয়ে তাকাল। দুঃখ যাপনে খানিক বিরতি দিয়ে বলল,
‘ ওরা আবার আসবে না? সবগুলো ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে। শুধু আমাকে আর রোদকে নিচ্ছে না।’
নাঈম ভাইয়া অবাক হয়ে বলল,
‘ সেকি! কেন? এই মাসুম বাচ্চা দুটোর সাথে এত বড় অন্যায় কেন?’
‘ এইযে বাচ্চা বললেন? এটাই অন্যায়। শুভ্র ভাইয়ের নিয়ম, বিশ বছর না হলে আড্ডা ফাড্ডায় বসা যাবে না। রিজেক্টড পিস!’
কথাটা বলে থামলো রাফিয়া। তারপর হঠাৎই চকচক করে উঠল তার চোখ। অত্যন্ত খুশি হয়ে বলল,
‘ নাঈম ভাইয়া? একটা ফেভার করবেন প্লিজ?আমি জানি, আপনি অত্যন্ত সহৃদয়বান মানুষ। আরও একটু সহৃদয়বান হয়ে ফোনের রেকর্ডারটা অন করে আড্ডায় যুক্ত হয়ে যান না প্লিজ?’
নাঈম ভাইয়া হেসে ফেললেন। চোখ ছোট ছোট করে বললেন,
‘ বন্ধু সেজে সিক্রেট ফাঁস করে দিতে বলছ! এ তো দেখি মীরজাফরের থেকেও গর্হিত কাজ! তবুও মিষ্টি মেয়েদের মন রাখতে এই গর্হিত অন্যায়টা করে ফেলা যেতে পারে। নাহিদ তুই থাক। আমি সুন্দরীদের খুশি করার ব্যবস্থা করছি।’
নাঈম ভাইয়ার কথা ভঙ্গিতে হেসে ফেললাম সবাই। নাঈম ভাইয়া দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে ছাঁদে উঠে গেলেন। বসার ঘরটা মুরব্বিদের দখলে বলে রাফিয়ার প্রস্তাবে আমাদের শোবার ঘরটিতে গিয়ে বসলাম আমরা। নাহিদ ভাইয়া চমৎকার মানুষ। উনার সবচেয়ে বড় গুণ, উনি খুবই সুন্দর করে কথা বলতে পারেন। একদম মুগ্ধ হওয়ার মতো সুন্দর। সবসময়ই ভদ্র দূরত্ব রেখে ঠাট্টা করেন। অযথা গায়ে পড়া স্বভাব নেই। হাসি-মজা করতে করতেই বুঝিয়ে ফেলতে পারেন কঠিন কঠিন বিষয়। শুভ্র ভাই ছাড়া নাহিদ ভাইয়ার সঙ্গ পছন্দ করে না বা করবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। রাফিয়াও বেশ মজার মেয়ে। সেন্স অব হিউমার চমৎকার। এই অতি চমৎকার দুটো মানুষের সাথে আড্ডা না জমে উপায় নেই। অতএব অল্প সময়েই জমে উঠলো আসর। হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হলো। কিছুক্ষণ আগের মন খারাপটা যেন হাওয়ায় মেলাল। প্রায় ঘন্টাখানেক আড্ডা চলার পর আমাদের খেয়াল হলো নাহিদ ভাইয়া আমাদের সাধারণ জ্ঞানের একটা চাপ্টার পড়াচ্ছেন, ‘প্রাচীন ইতিহাস’। আমি আর রাফিয়া বিস্মিত হলাম। ঠিক তখনই স্প্রিংয়ের মতো ছুটে এলো আদিবা। বলল,
‘ রোদাপু? রোদাপু? দাদাভাই তোমায় ডাকে। এক্ষুনি।’
শুভ্র ভাইয়ের কথা শুনতেই মুখটা মলিন হয়ে এলো আমার। হাসি মিলিয়ে গেল। মনে পড়ল একটু আগেকার সমস্ত রাগ আর অভিমানের কথা। গম্ভীর মুখে বললাম,
‘ কেন ডাকে? তোর দাদাভাইকে গিয়ে বল, রোদাপু এখন পড়ছে। আসতে পারবে না।’
আদিবা সেকেন্ডখানি বিলম্ব না করে যেভাবে এসেছিল সেভাবেই ছুটে বেরিয়ে গেল। নাহিদ ভাইয়া একবার আমার দিকে চাইলেন। আমি চাইতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদু হাসলেন। আবারও শুরু হলো গল্প ঝুড়ির ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া। কিন্তু দশ মিনিটের মাথায় আবারও দরজায় এসে দাঁড়াল আদিবা। বলল,
‘ দাদাভাই তোমায় ডাকছে রোদাপু। এক্ষুনি ডাকছে।’
আমি ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালাম। সন্দিহান কন্ঠে বললাম,
‘ তোর দাদাভাই কোথায়?’
আদিবা বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে দরজার বাইরে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা কারো দিকে তাকাল। তারপর জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল,
‘ নেই।’
আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম। রাগে-অভিমানে উনাকে জ্বালাতেই বললাম,
‘ যাব না। তোর দাদাভাইকে গিয়ে বল রোদাপু ব্যস্ত আছে। কোনোভাবেই আসতে পারবে না।’
আদিবা আবারও বিভ্রান্ত চোখে দরজার পাশে তাকাল। তারপর ধীরে ধীরে সরে গেলো দরজা থেকে। খাবার টেবিলেও আমাকে মাঝে রেখে রাফিয়া আর নাহিদ ভাইয়া দুজন দুপাশে বসলেন। নাহিদ ভাইয়া একটা গল্প বলছিলেন। প্রাচীন ইতিহাস থেকে কোনো এক রাজার খন্ড জীবনের কাহিনী। তারই রেশ ধরে রাফিয়ার ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্যে হাসাহাসি করছিলাম তিনজন। আশেপাশের দিকটা খেয়ালই ছিলো না তখন। খাওয়া-দাওয়া শেষে হাত ধুতে ভেসিনে যেতেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়লেন আম্মু। সবার নজর এড়িয়ে শান্ত অথচ তীব্র কন্ঠে বললেন,
‘ নাহিদের সাথে কী এতো হাসাহাসি তোমার? মানুষজন কী বলবে?’
আর কোনো কথা নয়। আম্মুর এই ছোট্ট কথাতেই ভেতরটা কেমন সংকুচিত হয়ে এলো আমার। মেজাজ, মন উভয়ই কেমন মেজমেজ করে উঠল। তারই মাঝে পাশে এসে দাঁড়ালেন শুভ্র ভাই। আমার পাশে দাঁড়িয়ে হাত ধুতে ধুতে শীতল কন্ঠে বললেন,
‘ পাঁচ মিনিটের মাঝে ছাদে আয়।’
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
‘ পারব না।’
উনি বললেন,
‘ দুই মিনিট সময়।’
আমি ততটা পাত্তা না দিয়ে বললাম,
‘ বাসা ভর্তি আত্মীয়। এখন আমি কোথাও যেতে পারব না। তাছাড়া অনেক রাত হয়েছে এখন…’
আমার কথার মাঝেই চোখ তুলে আয়নার ভেতর দিয়েই আমার দিকে তাকালেন শুভ্র ভাই। উনার গম্ভীর, ভয়ঙ্কর দৃষ্টি দেখে গলা শুকিয়ে গেল আমার। কথা থেমে গেল। অদ্ভুত এক ভয়ে ধুকপুক করে উঠল বুক। উনি সেই ভয়ঙ্কর চাহনি নিয়েই বললেন,
‘ এক মিনিটের মাঝে ছাদে চাই।’
কথাটা বলে একটা সেকেন্ডও দাঁড়ালেন না শুভ্র ভাই। এদিকে ভয়ে, আতঙ্কে আমার কাঁপুনি উঠার জোগার। আমি ভেজা হাতটা কোনোরকম তোয়ালেতে মুছে ছাদের দিকে হাঁটা দিলাম। অজানা আশঙ্কায় হৃদপিণ্ডটা লাফাতে লাগল ধুরুধুরু। সবার চোখ এড়িয়ে, কাঁদো কাঁদো মন নিয়ে যখন ছাদে পৌঁছালাম তখন চারদিকে ভয়াবহ অন্ধকার। ছাদের সব আলো নেভানো। চারপাশটা ছিমছাম, নীরব। এই নিশ্চিহ্ন অন্ধকারেও ছাদের এক কোণে সুঠাম এক পুরুষের ছায়া দেখে থমকে গেলাম। ভয়মাখা পদক্ষেপে সেই ছায়ার কাছাকাছি দাঁড়িয়েই অটোমেটিক বলে ফেললাম,
‘ সরি।’
আমার কাঁপা কন্ঠে শুভ্র ভাইয়ের মাঝে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। উনি ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলেন। এক চুল পরিমাণ নড়লেন না। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে শীতল কন্ঠে বললেন,
‘ আমি জাপান চলে গেলে তুই খুব খুশি হবি রোদ?’
এমন একটা সময়ে এমন প্রশ্নে কিছুটা অবাক হলাম আমি। বিস্ময় প্রকাশের সাহস না পেয়ে নিচু কন্ঠে বললাম,
‘ মানে?’
আমার প্রশ্নে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালেন শুভ্র ভাই। একদম আচমকা আমার বাহু খামচে ধরে নিজের দিকে টেনে বললেন,
‘ নাহিদকে তোর ভালো লাগে? টেল মি দ্য ট্রুথ।’
উনার হঠাৎ এমন রূঢ় ব্যবহারে চমকে উঠলাম আমি। শুভ্র ভাই আমার জন্য সবসময়ই ভয়ের দেশের লোক। কোনো এক অদ্ভুত কারণে উনাকে আমি আম্মুর থেকেও বেশি ভয় করি। উনার একটা চাহনিই আমার সব সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে যথেষ্ট। উনার একটা ইশারাতেই পরাজিত আমার জেদ। নারীসত্ত্বা। এবারও আমি ভয় পেলাম। ভীষণ ভয়ে হারিয়ে ফেললাম কথার খেঁই। শুভ্র ভাই আবারও তীব্র ঝাঁকি দিয়ে বললেন,
‘ কী হলো? বল? ভালো লাগে?’
আমি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম,
‘ না।’
শুভ্র ভাই মাথা নুইয়ে আমার চোখের কাছে চোখ এনে গভীর চোখে তাকালেন। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে শুধালেন,
‘ তাহলে কী খারাপ লাগে?’
আমি অসহায় চোখে চাইলাম। মাথা নুইয়ে মৃদু কন্ঠে বললাম,
‘ না।’
শুভ্র ভাইয়ের হাতের পাকড় আরও শক্ত হলো। বন্ধ হয়ে গেল বাম বাহুর রক্ত সঞ্চালন। আমি তীব্র ব্যথায় হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কাতর কন্ঠে বললাম,
‘ ছাড়ুন। লাগছে।’
শুভ্র ভাই নিজের মনে বললেন, ‘ছেড়ে দিব?’ তারপর তীব্র বিদ্বেষ নিয়ে একহাতে গাল চেপে ধরে বললেন,
‘ এজন্যই বুঝি এতো ব্যস্ততা তোর? এতো হাসি? এতো আনন্দ? কই? আমার আশেপাশে থাকলে তো এতো খুশি আসে না!’
শুভ্র ভাইয়ের কোনো কথা আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাল না। গালদুটোর তীব্র ব্যথায় ছলছল করে উঠল চোখ। আমি অবাক হয়ে দেখলাম পরিচিত শুভ্রের অপরিচিত রূপ। ভয়ঙ্কর রাগ। আমি কোনো রকম বললাম,
‘ ছাঁড়ুন।’
শুভ্র ভাই ডানহাতটা পিছুমোড়া করে নিজের বুকের কাছাকাছি এনে দাঁড় করালেন আমায়। থমথমে কন্ঠে বললেন,
‘ ছেঁড়ে দিব! হু? ছেঁড়ে দিব? একবার ছেঁড়ে দিলে তোর কী পরিণতি হবে বুঝতে পারছিস? ছেঁড়ে দেওয়া জিনিসে যে আমি চোখ ফিরিয়ে তাকাই না জানিস?’
কথাটা বলে হাতের পাকড় আরও শক্ত করলেন শুভ্র ভাই। উনার লোহার মতো শক্ত আঙ্গুলের চাপে ভেঙে যাওয়ার জোগার আমার ছোট্ট, নরম হাত। আমি চাপা আর্তনাদ করে বললাম,
‘অনেক বেশি ব্যথা লাগছে শুভ্র ভাই। আমি কিন্তু মামানিকে বিচার দিব। ছাঁড়ুন। ছাঁড়ুন প্লিজ।’
‘ কেন? আমি ছাঁড়লেই নাহিদের কাছে যেতে পারবি বলে? কী এমন আছে ওর? নাও টেল মি! তারপর ছেঁড়ে দিব। জীবনের তরে ছেড়ে দিব। বল, কী দিয়ে এতো তাড়াতাড়ি এতো খুশি করে ফেলল তোকে?’
উনার মুখে অযথা ফালতু কথা শুনতে শুনতে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল আমার। হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,
‘ ফালতু কথা বলবেন না। মামানি ঠিকই বলে রেগে গেলে আপনি পাগল হয়ে যান। আপনি ইনহিউম্যান। ছাঁড়ুন।’
‘ ফালতু কথা! তা তো হবেই। আমি বরাবরই তো ফালতু কথাই বলি। নাহিদের কথা বুঝি খুব মিষ্টি?’
‘ আপনি কথায় কথায় উনাকে কেন টানছেন? সমস্যাটা কী?’
শুভ্র ভাই উত্তর দিলেন না। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আমায় ছেড়ে দিয়ে দূরে ঠেলে দিলেন। হালকা হেসে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন,
‘ সমস্যা! এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা যে তুই আমার সমস্যাটাই কখনো বুঝলি না। ইনহিউম্যান! ইনহিউম্যান!’
শব্দদুটো বিড়বিড় করে আবারও হাসলেন তিনি। ঠিক সেই সময় ছাদের দরজার কাছে এসে দাঁড়াল কেউ। কানে ফোন হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটা বিস্ময় নিয়ে বলল,
‘ সরি ফর ইন্টারফেয়ার! আমি বোধহয় ভুল সময়ে চলে এসেছি। তোমরা কী ঝগড়া করছ?’
শুভ্র ভাই আবছা অন্ধকারেই স্থির চোখে চেয়ে রইলেন আগুন্তকের দিকে। চোখে তীব্র ঘৃণা নিয়ে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে দুয়েক পা এগিয়ে গেলেন। সামনের ব্যক্তিটিও অনড়, অবিচল। শুভ্র ভাই কয়েক পা এগিয়ে তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
‘ উড ইউ প্লিজ স্টে এওয়ে ফ্রম হার?’
নাহিদ ভাইয়া উত্তর দিলেন,
‘ নো। আই ওন্ড।’
আমি থমকে গেলাম। শুভ্র ভাই নাহিদ ভাইয়াকে যতটা অপছন্দ করেন। নাহিদ ভাইয়াও যে ততটাই বিদ্বেষ পোষন করেন তা যেন এইমাত্র উপলব্ধি করলাম। শুভ্র ভাই এবার শীতল ধমকি দিলেন। বললেন,
‘ জাস্ট স্টে এওয়ে ফ্রম হার। আদারওয়াইজ, আই উইল কিল ইউ।’
নিজের কথা শেষ করে একটাবারও পেছনে না ফিরে নিচে নেমে গেলেন শুভ্র ভাই। আমি আগের জায়গাতেই থম ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। কী হলো, কী হয়ে গেলো, এক মুহূর্তের জন্য কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারলাম না। নাহিদ ভাইয়া আমাকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এলেন। উনার ঠোঁট নড়ল। কিছু বললেন। কিন্তু আমার মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাল বলে মনে হলো না। আমি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম। নতুন দেখা শুভ্র ভাইকে নিয়ে ভাবতে দেখলাম। রাগী শুভ্রকে আমি জানতাম। উনার রাগ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি জানতাম। কিন্তু এই ধ্বংসাত্মক শুভ্রকে আমি জানতাম না। আজ উনার প্রতিটি চাহনি ছিল ভিন্ন রকম। ভয়ঙ্কর। উনাকে আমি এতোটা ডেস্পারেট বোধহয় আগে কখনো দেখিনি। এতো জেদ, এতো বিদ্বেষ! হঠাৎ কী হলো উনার? এমন তো হওয়ার কথা না! নাহিদ ভাইয়া চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
‘ শুভ্রর সাথে আমার কোনো পার্সোনাল সমস্যা নেই। তবুও আমার প্রতি তার বিহেভিয়ার এতো উগ্র কেন বুঝে উঠতে পারছি না। তোমাদের মাঝে কী কিছু চলছে? আমি কী কোনোভাবে তাকে হার্ট করছি রোদ?’
আমি উত্তর দিলাম না। ভীষণ নিঝুম রাতে, সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে উপলব্ধি করলাম গল্প বদলের খেলা।
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/rodsuvro/
[ বিঃদ্র-১ঃ বেশ বড় হয়ে গিয়েছে বলে বাকিটুকু পরের পর্বে থাকবে। এতো দীর্ঘ অপেক্ষার জন্য পাঠকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। পেইজের রিচ ডাউন হয়ে গিয়েছে। অনেকের কাছে লেখা পৌঁছাচ্ছে না। যার ফলে লেখার আগ্রহটাও নষ্ট হচ্ছে খানিক। যাদের কাছে লেখা পৌঁছাচ্ছে তাদেরকে রিয়েক্ট, কমেন্ট এবং সম্ভব হলে শেয়ার দিয়ে পাশে থাকার অনুরোধ। ভালোবাসা
বিঃদ্র-২ঃ অতি শীঘ্রই প্রেমকথনে প্রোপার সমাপ্ত পর্বও আসবে ইন-শা-আল্লাহ।]