#দ্বিতীয় পুরুষ পর্ব ৮
নীলাভ্র জহির
রুপক মোবাইল কানে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো কথা বলতে। চিত্রা চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় বিছানা থেকে উঠে পড়ল। তার স্বামী এত রাতে কার সঙ্গে কথা বলবে, ভাবল সে। নিঃশব্দে সেও বাইরে বেরিয়ে এলো রূপকের কথা শোনার জন্য। কিন্তু রূপক একদম উঠানের মাঝখানে গিয়ে কথা বলছে। তার পিছু পিছু এতদূর যাওয়া ঠিক হবে না। তাই চিত্রা ঘরের দরজা থেকে ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কয়েক মিনিট পরেই ফিরে এলো রূপক।
চিত্রা চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে পড়ে রইল। রুপক আজ রাতে তাকে আর জাগালো না। সন্দেহ জাগলো চিত্রার। নার্গিস ফোন করেনি তো? প্রতিদিন রাতে রূপক চিত্রাকে ঠেসে ধরে, জাপ্টে ধরে ঘুমায়। কখনো বা গায়ের উপর একটা পা তুলে দিয়ে ঘুমায়। কিন্তু আজ রাতে চিত্রা ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে কি রূপক তাকে জড়িয়ে ধরল না নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে? চিত্রার দুশ্চিন্তায় আর ঘুমই এলো না। অনেকক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকার পর পাশ ফিরে আবারো শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুম আসলো না। এর মধ্যেই ঘুমিয়ে পরেছে রূপক। স্ক্রিন টাচ মোবাইল চিত্রা চালাতে জানেনা। নয়তো সে রূপকের মোবাইলটা নিয়ে দেখতো কার সঙ্গে এত রাতে কথা বলেছে রূপক। সেটা সে পারছেনা। চিত্রার মনটা খুব খচখচ করতে লাগলো।
আজ খুব ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠল চিত্রা। ঘর ও উঠান ঝাড়ু দিয়ে গোয়াল ঘর থেকে গরু গুলোকে বের করল। গরুর হাম্বা হাম্বা ডাক শুনে বোঝা যাচ্ছে খিদে পেয়েছে তাদের। খড় কেটে তাদের খাবারের আয়োজন করতে হবে। গরুকে খাবার দিয়ে তারপর ভাত বসাতে যাবে চিত্রা। তার শাশুড়ি আজকে এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। উঠলে হয়তো অনেক কথাই ভাবতেন তিনি। রান্না ঘরের চালার একপাশে পালা করে রাখা লাকড়ি থেকে কয়েকটা লাকড়ি টেনে বের করে চিত্রা রান্না তুলে দিল। পাশাপাশি গরুর জন্য খড় কাটতে লাগলো।
ধীরে ধীরে সূর্য উঠে গেল। জোসনা বাইরে এসে দেখলেন চিত্রা রান্নাবান্না প্রায় শেষ করে ফেলেছে। তিনি ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তাকে খুশি করা গেল কিনা বুঝতে পারল না চিত্রা। হাতের তালুতে মাজন নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে তিনি পুকুর ঘাটের দিকে চললেন।
একগাদা থালা-বাসন জমে আছে। শাশুড়ি মা ওঠার পরে বাসনগুলো নিয়ে পুকুর পাড়ে ছুটল চিত্রা। তাকে দেখে জোসনা বললেন, উল্টাপাল্টা কাম করো কেন? আগে থালা-বাসন ধুইবা। তারপর ভাত তরকারি রানবা।
চিত্রা কোন উত্তর দিল না। এত নিয়মকানুন জানা নেই তার। আস্তে আস্তে সব শিখে নিতে হবে। ঘাটে বসে ধীরে ধীরে সে বাসন মাজতে লাগলো। জোসনাকে বলল, আম্মা চুলার ওপর তরকারি আছে। জাল কমাইয়া রাইখা আইছি। আপনে একটু চুলা থাইকা নামাইয়েন।
জোসনা বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। বাসন মাজা অর্ধেক হয়েছে। এমন সময়ে ঘাটের ওপর গলা শোনা গেল রূপকের। চিত্রার বুকের ভেতর কিছু একটা নেচে উঠলো। ভালোলাগার আবেশে মন ভরে গেল। রূপক এখানে আসছে। আরও মনোযোগ দিয়ে বাসন মাজতে থাকলো চিত্রা। পিছন ফিরে তাকালো না। উঁচুতে বসে রূপক গলা খাঁকারি দিলো। চিত্রা জানে এটা তাকে উদ্দেশ্য করে দেয়া হয়েছে। তবুও সে পিছন ফিরে তাকালো না।
রূপক বলল, কিগো বউ। কি করতাছো?
উত্তর দিল না চিত্রা। সে কি করছে এটা তো দেখাই যাচ্ছে। তারপরও আবার জিজ্ঞেস করার মানে হয়না।
শাশুড়ি মা হাস ছেড়ে দিয়েছেন। এক ঝাঁক হাস হইচই করতে করতে পুকুরে এসে নামল। ঘাটের এদিকে আসতেই হাত দিয়ে হাঁসগুলোকে হুস হুস করে তাড়িয়ে দিল চিত্রা। তারপর আবারো বাসন মাজতে শুরু করল।
রুপক দাঁত মাজছিল এতক্ষণ ধরে। এবার ঘাটের নিচে নেমে এলো সে। চিত্রার পাশে বসে বলল, তোমার কি মন মেজাজ খারাপ নাকি?
চিত্রা মৃদু স্বরে উত্তর দিল, কই না তো?
কথাবার্তা কইতাছো না।
দেখতাছেন তো কাম করতাছি।
কাম করলে কি কথা কওন যায় না?
তাড়াতাড়ি কাম শেষ করতে হইবো। কথা কইলে দেরি হইয়া যাইবো।
অ আচ্ছা।
রূপক একগাদা পিক ফেলল পানিতে। চিত্রা কপট রাগের সুরে বলল, দেখতেছেন না এইখানে থাল ধুইতাছি। এইখানেই আপনের ছ্যাপ ফেলতে হইল?
রূপক দাঁত বার করে হাসলো। কালো ছাইয়ের মাজন দিয়ে দাঁত মাজার কারণে দাঁতগুলোতে কালি লেগেছে। বিদঘুটে দেখালো ওর হাসি। তাও সেই হাসি দেখতে চিত্রার ভালো লাগলো। স্বামীর সবকিছুই তার ভালো লাগে। এইযে রূপক সকাল বেলা খালি গায়ে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজে এটা দেখতেও তার ভালো লাগে। রূপক পুকুরের পানিতে জোরে জোরে শব্দ করে কুলি করছে। ধীরেধীরে থালা বাসন ধুচ্ছে চিত্রা। সে রূপকের গোসল করা দেখতে চায়। মুখ ধোয়া শেষে একটা লাফ দিয়ে পুকুরের পানিতে নেমে পড়ল রূপক। জোরে জোরে শব্দ করে সাঁতার কাটতে কাটতে পুকুরের মাঝ পর্যন্ত গিয়ে কয়েকটা ডুব দিল। চিত্রা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল সেদিকে। আর মনে মনে ভাবলো, যদি সেও পারতো এখন পুকুরের পানিতে লাফ দিয়ে নেমে পড়তে।
রূপক ধীরে ধীরে পুকুরের ওপরে উঠে আসছে। গামলা ভর্তি থালা-বাসন নিয়ে চিত্রা উপরে উঠে গেল। আর দেরি করা যাবে না। জোসনা আবার চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিবেন।
রূপকের জন্য টিফিন বাটিতে গরম গরম ভাত তরকারি তুলে দিলে চিত্রা। ভাত খেয়ে রুপক ঘরে এলো জামাকাপড় পরতে। চিত্রা ঘরে ঢুকে বলল, আপনার মোবাইলটা রাইখা যাইবেন? ছবি দেখমু।
ভয়ে ভয়ে বুকে কথাটা বলেছিল চিত্রা। রূপক বলল, আইজ রাইখা যাওন যাইবো না। জরুরি কল আসবো। আরেকদিন রাইখা যামু।
মনের সন্দেহ আরও দানা বাধল চিত্রার। কি এমন জরুরি কল আসবে রূপকের যার জন্য ফোনটা বাসায় রেখে যাওয়া যাবে না? নিশ্চয় এখনও নার্গিসের সঙ্গে যোগাযোগ আছে রূপকের। নার্গিস হয়তো তাকে মিস কল দেয়।
চিত্রা কোন উত্তর না দিয়ে শক্তভাবে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইল। রূপক বলল, ওই ঘর থাইকা আমার রুমাল আইনা দাও।
একটুও নড়ল না চিত্রা। শক্ত ভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো সে। কয়েক সেকেন্ড পরে রূপক তার দিকে তাকালো।
কি হইছে বউ তোমার? এমন মুখ কালা কইরা রাখছো কেন?
শখে কালা কইরা রাখছি। যে কপালপোড়া, সে আজীবন কপালপোড়াই থাকে। যার জন্ম থাইকা দুঃখ তার দুঃখ কোনদিনও ফুরায় না।
কথাটা বলেই চিত্রা ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরে গেল রুমাল আনতে। তার হঠাৎ খুব অভিমান হচ্ছে। এই অভিমান কেন ও কিসের জন্য চিত্রা তা জানেনা। রুমালটা গুছিয়ে সে রুপকের হাতে তুলে দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল। দরজা ঠেলে দিয়ে রূপক জাপটে ধরল বউকে।
কি হইছে আমার বউডার?
কিছু হয় নাই। আপনের দেরী হইয়া যাইতাছে। কামে যান।
আমার মায় কিছু কইছে?
না, কিছু কয় নাই।
তয় তোমার মন খারাপ ক্যান?
চিত্রা নিরুত্তর তাকিয়ে রইল মাটির দিকে। গাল ফোলা তার। রূপক বলল, বুঝছি। মোবাইলটা রাইখা যাইতাছি না বইলা তোমার মন খারাপ হইছে। রাগ কইরোনা লক্ষী বউ আমার। ছোট মানুষের মত করলে তো হইবো না। আমার জরুরি কল আসবো। শহরের দোকান থাইকা মাহাজন কল দিব। আজকে আরো কিছু মাল ডেলিভারি দেওয়ার কথা। আজকে মাল দিতে নিষেধ কইরা দিমু। মেলা জরুরী কাম আছে। তুমি রাগ কইরোনা।
রূপকের কথাটা বিশ্বাস হলো না চিত্রার। অবিশ্বাসী ভঙ্গিতে এসে নক দিয়ে মাটি খুড়তে লাগলো। রূপক বলল বউ এখন মন খারাপ কইরা থাইকো না। হাসিমুখে আমারে বিদায় দেও। আজকে বাজার থাইকা তোমার জন্য কিছু কিনে আনব। তোমার কি খাইতে মনচায় কও?
আমার জন্য কিছু আনতে হইবো না।
আহারে বউ আমার এখনো রাগ কইরা রইছে। রাগ কইরা থাইকো না সোনা। আমারে ভালোমতো বিদায় দেও। তোমার জন্য গরম গরম জিলাপি আনমু। সন্ধ্যার পর মতির দোকানে গুড়ের জিলাপি ভাজে। জিলাপি খাইবা?
চিত্রার চোখের সামনে গুড়ের জিলাপি ভেসে উঠলো। খেতে ইচ্ছা করলো তার। তবুও সে মুখ গোমরা করে বলল, না খামুনা।
বিস্কুট টিস্কুট কিছু আনমু?
না, কিছুই আনতে হইবো না।
ঠিক আছে তাইলে থাকো। ভালো মতো থাইকো। বাড়ির বাইরে যাইও না। মার লাগে ঝগড়াঝাঁটি কইরো না।
আমারে কি আপনার ঝগড়াইট্যা মহিলা মনে হয়?
না, তুমি তো আমার লক্ষী বউ।
কথাটা বলেই রূপক চিত্রাকে আরো একবার জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দিল। টিফিন ক্যারিয়ার হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো সে। চিত্রার মনটা কেমন খচখচ করতে লাগল। এই স্বামী তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। কোনভাবেই স্বামীকে সে হারিয়ে ফেলতে চায় না।
বাড়ির উঠানে শাকসবজির চাষ করেছেন জোসনা বেগম। কুমড়া ও লাউয়ের গাছ বড় বড় হয়ে গেছে। ছোট কচি লাউয়ে ঝুলে পড়েছে ডালপালা। খুন্তি দিয়ে মাটি খুরে কয়েকটা বাঁশের খাটিয়া দিয়ে তিনি জাংলা তৈরি করলেন।
চিত্রাকে বললেন, জাংলির এর উপরে সাবধানে গাছের লতাপাতা গুলো তুলে দিতে। বেশ কয়েকটা লাওয়ের কচি ডগা বেরিয়েছে। চিত্রা খুব সাবধানে ডগাগুলো ধরে জাংলায় তুলে দিলো। সবুজ জাংলি দেখতে তার খুব ভালো লাগছে। লাউয়ের কচি কচি পাতাগুলো ভীষণ সুন্দর। মৌমাছি ও ভোমরা উড়ছে উপরে। চিত্রা খুব একটা বাড়ির বাইরে বের হয় না। আজ বাইরে এসে খুব ভালো লাগলো। মনে মনে ভাবলো এখন থেকে সময় পেলেই বাইরে এসে বসে থাকবে। লাউয়ের এই ডগা গুলোর বড় হওয়া দেখবে।
রূপক আজ রাতে খুব তাড়াতাড়ি ফিরল। চিত্রা ভেবেছিল আসার সময় হয়তো রূপক তার জন্য গুড়ের জিলাপি নিয়ে আসবে। কিন্তু কিছুই নিয়ে আসে নাই সে। চিত্রা অনেকটা হতাশ হয়ে বলল, জিলাপি আনবেন কইলেন?
তুমি তো মানা কইরা দিছিলা।
আমি তো রাগে কইছিলাম। সেজন্য আপনি আনবেন না?
রূপক হাসতে হাসতে বলল, মাইয়া মানুষের রাগ বুঝনের উপায় নাই। তুমি কইলা জিলাপি আনতে হইবো না। সেজন্য আমিও নিয়ে আসি নাই। এখন আবার কইতাছ জিলাপি খাইবা। আমি তাইলে আবার বাজার যাই। নিয়া আসি তোমার জন্য জিলাপি।
না, থাউক। এত রাইতে আপনারার যাওয়ার কাম নাই। আপনে ভাত দুইটা খাইয়া জিরাইয়া নেন।
হ, ভাত দাও। আইজ আব্বা আসতে দেরি হইব। আমি ভাত খাইয়া একটু আরাম করি। আইজ অনেক গরম পরছে।
আপনি অনেক তাড়াতাড়ি ফেরলেন যে।
আব্বারে রাইখা আইছি। কি রান্না করছো?
ডাটা শাক ভাজি আর আলু বেগুনের তরকারি।
মাছ নাই?
না, মাছ কিইনা পাঠাইছেন যে থাকবো।
আব্বারে কল দিয়া মাছ আনতে কই?
এত রাইতে আর মাছ আনতে কইয়েন না। আম্মায় চিল্লাচিল্লি করব।
তুমি কাটতে বইলে আম্মায় চিল্লাইবো না।
চিত্রা কোন উত্তর দিল না। রাত খুব বেশি হয়নি। সন্ধ্যা পেরিয়েছে মাত্র। তবে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক এবং গভীর অন্ধকারের কারনে মনে হচ্ছে অনেক রাত। এত রাতে মাছ আনলে কাটতে খুব ঝামেলা হবে।
রূপক বাবার নাম্বারে কল দিয়ে মাছ নিয়ে আসতে বলল। তারপর চিত্রাকে বলল,, আমারে দুইটা খাওন দেও। খুব খিদা লাগছে।
মাছ খাইবেন না?
আব্বায় আসতে দেরি হইব। এখন দুইটা খাইয়া লই। মাছ দিয়া আবার খামু।
চিত্রা তার স্বামীকে ভাত বেড়ে দিল। বারান্দায় পাটিতে বসে তার স্বামী করে ভাত খাচ্ছে। খুব তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে দেখে চিত্রার খুব ভালো লাগছে দেখতে। এই মানুষের সবকিছুই তার ভালো লাগে। একজন শ্রেষ্ঠ স্বামী পেয়েছে চিত্রা।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রূপক চিত্রাকে নিয়ে বারান্দায় বসে রইল। খুব সুন্দর দখিনা বাতাস আসছে। বাতাসে গা ঠান্ডা হয়ে যায়। চিত্রা এক খিলি পান এসে দিল রূপককে। রুপকের একটু একটু পান খাওয়ার অভ্যাস আছে। পান খাওয়ার পরে রূপক যখন তার কাছাকাছি আসে, ওর মুখ থেকে একটা সুন্দর পানের সুঘ্রাণ বের হয়। সেই গন্ধটা চিত্রার খুব ভালো লাগে।
রুপক পান মুখে দিয়ে বলল, বসো কথা কই। আইজ দোকানে মাল আসার কথা ছিল। দুই দিন আগেই তো মাল নিলাম। তাই আইজ মাল পাঠাইতে না কইরা দিছি। বেচাকেনা নাই। এত মাল দিয়া কি হইব?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রূপক আবারও বললো, খালি দোকান দিয়া পোষাইতাছে না। বাজারে মেলা কাপড়ের দোকান হইছে। মানুষ এহন সব দোকান থাইকা সদাই করে। আগে আমাগো দোকান, আর দুই একখান দোকান ছিল। তখন ভালোই বেচাকেনা হইত। এখন দোকানো বাড়ছে, বেচাকেনাও কইমা গেছে।
কি করবেন ভাবতাছেন?
ভাবতাছি দর্জির কাজ শিখমু। দোকানে বইসা যদি দুই একটা কাপড় চোপড় সেলাইতে পারি। ভালো আয় হইবো।
হ। জামা সেলাইতে এহন অনেক খরচ লাগে।
তোমার কি কিছু লাগবো? লাগলে আমারে কইও।
আমার কিছু লাগবো না। বিয়াতে সবই পাইসি।
ত্যাল, সাবান, সোনো পাউডার কিছু লাগলে কইও। ত্যাল সাবানও তো পাইসি। অহন আর কিছু লাগবো না।
আচ্ছা, ঠিক আছে।
রূপক একগাদা পানের পিক ফেলল বাইরে।
এমন সময় অন্ধকার ছাপিয়ে দুজন মহিলাকে আসতে দেখা গেল। ওনারা বাড়ির ভেতর আসতেই রূপক সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন চাচী?
মহিলা বললেন, ভালো। বউ দেখতে আইলাম।
– বসেন চাচী।
জোসনার গলা শোনা গেল, কে আইছে?
রূপক উত্তর দিলো, নার্গিস আর ওর মা আইছে।
নার্গিস নামটা শুনেই চমকে উঠলো চিত্রা। বুকের ভেতর ধক করে উঠল। এই তাহলে সেই নার্গিস? এখানে কেন এসেছে? মেয়েটার কি লাজ লজ্জা নাই? সে আসবে বলেই কি আজকে তারাতাড়ি বাড়ি ফিরেছে রূপক? সন্দেহ মনে জাগতেই চিত্রার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে লাগল।
চলবে..