#এক কাপ চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব ১৬
(৪৬)
সকালের প্রথম আলো এসে জানালার কাঁচ ভেদ করে পড়েছে সাগরিকার মুখে। গাড়ি চলছে না। তার গায়ে জড়ানো তাশদীদ এর জ্যাকেট। মুখ উঁচু করে দেখতে পেল নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছে তাদের গাড়ি। সিট বেল খুলে নিচে নামতেই দেখতে পেল তাশদীদ দাঁড়িয়ে আছে নদীর পাড়ের একদম কিনারা ঘেঁষে। শীত কালে নদী প্রায় নিজের যৌবন হারাতে বসেছে। পায়ের উঁচু হিল গুলো নদীর পাড়ের বালিতে ডেবে যাচ্ছে। কিছুটা হেটে তাশদীদের পাশে দাঁড়াতেই তাকে বা হাতে আকড়ে ধরেছে তাশদীদ।সাগরিকা তাশদীদের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখতে পেল সে তাকিয়ে আছে নদীর পানির দিকে।কিছুটা দ্বিধা নিয়ে সাগরিকা বলল,
“আমরা রাতে ফিরিনি?”
“না।”
“পুরো রাত গাড়িতে ঘুমিয়েছি?আশ্চর্য!”
“আয় আমার সাথে।”
নদীর পাড় পেরিয়ে তারা ধীরে ধীরে হাঁটছে পাকা রাস্তার দিকে। রাস্তা কিছুটা সিক্ত।তাশদীদ সাগরিকাকে বলল জুতো খুলে ফেলতে। হিল পায়ে সে হাটতে পারছে না। জুতো খুলতেই তাশদীদ সাগরিকার জুতো হাতে নিচ্ছিলো কিন্তু সাগরিকা না করলো।কারণ আর যাই হোক তার জুতো তাশদীদ নিয়ে হাঁটবে এমন হতে পারে না।
“গাড়িতে রেখে আসি?”
“অনেক দূর এসে পড়েছি।তাছাড়া বাক ঘুরেই গাড়িতে যাবো।”
“কোথায় যাচ্ছি?”
“দেখা যাক।”
চারপাশে নানান ধরনের ফুলের গাছ।মাথার উপর দাঁড়িয়ে আছে পাইন গাছ। পাম ওয়েল গাছ গুলো দেখতে দৈত্যের মতোন।কিন্তু সামনে থাকা শিউলি ফুলের গাছ গুলো যেন নিজ থেকে উপহার দিচ্ছে শুভ্র সাদা রঙের গালিচা।খালি পায়ে হাঁটতে ভালো লাগছিল। বিশেষ করে ঘাসের ডগায় লেগে থাকা শিশিরের কারণে।
তাশদীদ চুপচাপ হেটে যাচ্ছিলো পাশাপাশি। হুট করে সাগরিকা তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমায় মেরে ফেলতে এনেছেন?এত যত্ন কেন করছেন?”
দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাশদীদ জবাব দিলো,
“হ্যাঁ,মেরে বালি চাপা দিয়ে দিবো।”
ভয়ে চুপসে গেল সাগরিকা।তাশদীদ কিছুটা পথ এগিয়ে গিয়ে দেখলো সাগরিকা সাথে নেই।পিছনে ফিরে তার কাছাকাছি গিয়ে ডান হাত ধরে সাগরিকাকে কাছে নিয়ে এলো।কপালে উষ্ণ আর্দ্র অধরের স্পর্শে শিউরে উঠেছে সাগরিকা।বা হাতে খামছে ধরেছে তাশদীদের পিঠের দিকের শার্ট।
তার দিকে তাকিয়ে তাশদীদ বলল,
“ছোট্ট একটা হাওয়া কী নদীর গতিপথ পাল্টে দিতে পারে?তুই তো আমার ভিতরে বইতে থাকা এক ধ্বংসাত্নক নদী।তার অস্তিত্ব ফিরিয়ে দিবো কী করে?
(৪৭)
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গার পর তাজবীদ তার মায়ের কাছে চায়ের কথা বলেছে। সকালের ওয়ার্ক
আউট করে ফিরে এসে নিজ ঘরে বসতেই তুলি তার জন্য চা নিয়ে এলো।সম্পর্কে তুলি তার ছোটো ফুপুর মেয়ে।ফুপা কৃষি কাজ করে।তাদের অনেক সহায় সম্পত্তি কিন্তু তার পেটে বিদ্যে খুব কম। কিন্তু তুলির বড়ভাই এপ্লাইড ফিজিক্স নিয়ে লেখাপড়া করছে দেশের বাহিরে। যেহেতু তুলির বাবা-মা গ্রামে থাকে তাই সেখানে তার লেখাপড়ার তেমন কোন একটা সুব্যবস্থা নেই এজন্যই সে তাশদীদের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছে।
কিন্তু সকাল সকাল সাগরিকার বদলে তুলির হাতে চাঁদ দেখে তাজবীদ কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। কিন্তু তার বিরক্তি চোখ মুখ প্রকাশ করলেও মুখে কিছু বলল না।
একটু রুক্ষ কন্ঠে সেতুলী কে জিজ্ঞেস করল
“সাগরিকা কোথায়? তুই কেন জানি এসেছে।”
“সাগরিকা আপু বাসায় নেই?”
“কোথায় গেছে?”
” গতকাল রাতে আপু কিংবা ভাইয়া দুজনের একজনও বাসায় ফেরেনি।”
“ভাইয়া সাগরিকাকে নিয়ে রাতে ফিরেনি?”
মুহূর্তের মধ্যেই চোখ মুখ কাঠকাঠ হয়ে এলো তাজবীদের। সে আর যাই হোক নিজের ভাইয়ের থেকে এমন আশা করেনি। দ্রুত কাপড় বদলে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল সে। আপাতত সে জানে না কোথায় যাচ্ছে শুধু জানে তাকে সাগরিকাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। কোনো বিপদ হয়ে যাওয়ার পূর্বেই।
(৪৮)
ইখুম ঘুমে বিভোর। তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাশেদ। ইখুমের হাতে গতকাল তার নখের আঁচড় লেগেছে।চুড়িতেও খানিকটা কেটেছে। কিন্তু এসবের কারণেই কাল বড় দূর্ঘটনা ঘটতে ঘটতে পার পেয়েছে।
কাল রাশেদ গাড়ি পার্ক করতে যাবে তখন সিকিউরিটি গার্ড বলেছিল সে করে দিবে।তাই রাশেদ চলে এসেছিল ইখুমের পিছন পিছন।কাছাকাছি আসতেই দেখতে পেল ইখুম পড়ে যাচ্ছিলো।বেঁচে থাকার জন্য ভরা নদীতে এক টুকরো কাঠের মতোন আগলে ধরেছিল রাশেদ তাকে।কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে সে ইখুমকে নিজের দিকে টেনে নিতে পেরেছিল।
ঘরে ফিরে ইখুম রাশেদকে ফোনের ম্যাসেজ দেখিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফোন হাতে নিয়ে বিহ্বল হয়ে বসেছিল রাশেদ। বিশ্বাস করা না করা সম্পূর্ণ এখন ইখুমের উপর। কারণ সে নির্দোষ এমন কোনো কথা সে বলবে না।কিন্তু ইখুম ফিরে আসার পর তাকে সে জিজ্ঞেস করেছিল,
“কিছু জানার নেই তোমার?”
“কোন সম্পর্কে? “
“ম্যাসেজ।”
“না।”
“বিশ্বাস করেছো এসব?”
“পরের ব্যাপার। সত্যি হলেও কিছু যায় আসে কী?”
“এতটা খারাপ আমি?”
“নিজের সন্তান কে খুন করতে চেয়েছিলেন।”
“আমি নিরুপায়।ছেড়ে যাবে আমায়?”
“জানি না।”
“সোজাসাপ্টা জবাব দাও। বিশ্বাস করেছো ম্যাসেজ?”
“না।”
ইখুমের কথায় মুখে হাসির দ্যুতি খেলে যায়
রাশেদের।মৃদু হেসে সে উঠে এসে ইখুমের পাশে বসে বলে,
“ভালোবাসো আমায়?”
ইখুম কাঠকাঠ গলায় বলল
“আমি আপনাকে মাপ করতে পারবো না।আমার কাছে আপনি অন্তত কোনো দাবী আপাতত রাখবেন না।আপনি পাপ করেছেন যত দিন অবধি আপনার পাপের প্রায়শ্চিত্ত নিয়ে আমি সন্তুষ্ট না হবো তত দিন আমাদের সংসার জীবন হবে মাক্কাল ফলের মতোন।বাহিরে খুব সুন্দর ভিতরের খবর কেউ জানবে না।এটাই আপনার শাস্তি।”
ইখুম তখনো ঘুমে রাশেদ গতকালের কথা ভাবছিল। হঠাৎ দরজায় শব্দ হয়। সাগরিকার মা এসে রাশেদ কে বলল,
“আম্মা স্ট্রোক রাশেদ। তাকে হাসপাতালে নিচ্ছে। সে হাসপাতালে যাবে না। সে বার বার করে বলছে তুই যদি সামিনাকে বিয়ে না করিস সে হাসপাতালে যাবে না। এখন কী হবে?”
রাশেদ একবার ঘুমন্ত ইখুমের দিকে তাকালো এরপর ফ্লোরের দিকে।তার দুচোখে জমেছে পানি।পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই।সত্যি কি তাদের অনুভূতি থাকতে নেই?
চলবে…………..