#ফাবিয়াহ্_মমো
রাতে ফিরার পর থেকে পূর্ণতার রুমের দরজা বন্ধ। নূরানী শত চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি। ফলাফল অসীম সীমায় শূন্য। পূর্ণতার রুম থেকে কোনো কান্নার আওয়াজ না এলেও কোনো সাড়াশব্দ আসছিলো না। মূল ভয়টা এখানেই ছিলো পূর্ণতা নিজেকে ক্ষতি করলো কিনা। নূরানী আর কোনো ভাবান্তর না করে খোদেজাকে কল দিয়ে সবটা জানায়। মেয়ের অবস্থা দেখে তিনিও চরম মাত্রায় ভয় পেয়ে সব কাজ গুটিয়ে রওনা দেন। এর মধ্যে পূর্ণতার বাবা কবির বাসায় ফিরলে জানতে পারেন পূর্ণতা আসার পর থেকেই নিজেকে রুমে বন্দি করে রেখেছে। কবির অফিসের পোশাক না পাল্টেই প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে দরজায় ধাক্কা মারতে থাকেন। কিছুক্ষন হাকডাকের পর ভেতর থেকে খট করে দরজাটা খুলে যায়। কবির কিছুটা আশ্চর্য হয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে পা দেন। পুরো রুম একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। জানালায় পর্দা দিয়ে বারান্দার দরজাও আটকে রেখেছে। ফ্যানটা ভূতুড়ে ভঙ্গিতে চলছে। ফ্যানের তিনটা পাখা এতো আস্তে ঘুরছে যে খালি চোখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। পূর্ণতা বেডের সাথে পিঠ লাগিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। হাটুদুটো থুতনির সাথে ঠেকিয়ে রাখা। চুলগুলো ছেড়ে রাখার পরও কেমন এলোমেলো লাগছে। হরর মুভিতে চুল ছেড়ে যেভাবে বসে থাকে, পূর্ণতাও সেভাবে বসে আছে। কবির ড্রিম লাইটের নীলচে আলোটা জ্বেলে দিয়ে পূর্ণতার পাশে বসে পরলেন। মেয়ের মাথায় হাত রেখে স্নেহভরা কন্ঠে বললেন,
– আমার মা এভাবে বসে আছে কেন? কেউ কিছু বলেছে?
পূর্ণতা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো শুধু। কোনো বাড়তি আওয়াজ করলো না। কবির অন্ধকারেও মেয়ের মলিন মুখটা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছেন। কোনো লাবণ্য ভাব নেই মুখে। হাসির মতো শ্রেষ্ঠ সুন্দর অলঙ্কারটা সুদূরে হারিয়ে গেছে। কবির মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– পূর্ণতা, আমাকে বল মা। সমস্যাটা খুলে বলো। আমি জানি, ব্যবসার চাপে তোমার দিকে লক্ষ রাখতে পারছিনা। যদি এই ডিলটা একটু হেলা করি, তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হবে। তুমিতো জানোই আমি ব্যবসায় আরো একবার লস খেয়েছিলাম।
পূর্ণতা অনেকক্ষন পর চোখ বাবার দিকে চোখ তুলে তাকালো। চোখে অশ্রু দেখা যাচ্ছে ওর। পূর্ণতা কিছুক্ষণ নিরবে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ফুপিয়ে কেদেঁ বললো,
– আমার কি দোষ বাবা? আমার কপালেই কেনো এমনটা জুটে? আমি কি অপরাধ করেছি? সবাই খালি আমার কাছ থেকে দূরে চলে যায়। মা আমাকে একফোঁটা সময় দেয়না। উনি কেমন মা? মা কখনো এমন হয়? অন্যদের মা-তো এমন করেনা। তুমি সবসময় ব্যবসার জন্য ব্যস্ত থাকো তাই তোমার কাছে কোনো অভিযোগ আমি করতে পারিনা। ছোট থেকে যে বড় হলাম, এ কেমন পরিবেশে আমি বড় হয়েছি? যেখানে সন্তানকে দেখাশোনার জন্য বাইরের মানুষ রাখা লাগে, সেখানে কে আমাকে ভালোবাসে? কে? যাকে আমি বিয়ে করলাম। এতোগুলো দিন তার হাতের পুতুলের মতো নেচে বেড়ালাম। যখন যেখানে যা করতে বলেছে আমি তাই চোখবুজে করেছি। একটা পাল্টা শব্দ উচ্চারণ করিনি। শ্বশুরবাড়িতে মিলেমিশে থাকবো আমার ভাগ্যে সেটাও জুটেনি। কখনো দেখেছো শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বাড়ির বউকে এতোটা আদর করে? আমার শ্বশুর-শ্বশুড়ি করতো। করতো কি তারা এখনো করে। আজ উনাদের অবস্থা দেখে আমার বুকটা ফেটে আসছিলো বাবা। উনাদের দেখভালের জন্য একটা নির্দিষ্ট মানুষ নেই। আপনার জামাইবাবা তার ইলেকশন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। বাবার ব্যবসা দুইহাতে একাই সামলাচ্ছেন। অথচ? অথচ আমি যে এখানে ওই বাড়ির বউ আর উনার স্ত্রী হয়ে জীবিত আছি সেদিকে কারোর ধ্যান নেই। উনি আমাকে দেখতেও আসেন না। খোঁজখবর নেয়া তো পরের ব্যাপার। মা প্রতিটা দিন সকাল বিকাল পূর্বকে নিয়ে কিসব বলে আমার তো ওগুলো শুনতে ভালো লাগেনা বাবা। পূর্ব এমন কি মহাপাপ করে ফেলেছে মা উনাকে দেখতেই পারে না?
পূর্ণতা চোখে হাত চেপে হু হু করে কাঁদতে লাগলো। কবির নিরুত্তেজ ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। খোদেজার ভাষ্যমতে, পূর্বের মতো রাজনীতিতে জড়ানো পুরুষরা একদিন-না-একদিন চরিত্র নষ্ট করে মেয়েছেলে নিয়ে বিছানায় শুবে। এরা উপরে ফিটফাট এবং ভেতরে সদরঘাট হতে পিছপা হয়না। পূর্ণতা এখন যেটা দেখছে সেটা পূর্ব নিজে ওকে ভালোরূপ দেখাচ্ছে, ভেতরের নোংরারূপ না। যার বংশের বাকি ভাইদুটোই ওমন লম্পট, অশ্লীল, অসভ্য ধরনের তার চরিত্র আর কতো বিশুদ্ধ হবে খোদেজার জানা আছে। তবে পূর্ব যদি ভালো হয়েই থাকে পূর্ণতা ওর কাছে দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবেনা। প্রথম ধাক্কাটা খেয়েছে ফুয়াদের নোংরা আচরণের শিকার হয়ে, দ্বিতীয় ধাক্কাটা খেয়েছে জাওয়াদের নিকৃষ্ট দুঃসাহসে। দুটো বেলায় পূর্বের সঙ্গ পায়নি পূর্ণতা। তৃতীয় ধাক্কার বেলায় পূর্ণতা জীবিত থাকেই কিনা তাই নিয়ে সন্দেহ হয় খোদেজার। নিজের মেয়েকে আর পূর্বের সাথে পাঠাতে তিনি মোটেও সাহস পান না। কবির সরল গলায় বললেন,
– তুমি এখন কি চাচ্ছো? তুমি কি পূর্বের কাছে যেতে চাও?
পূর্ণতা থুতনি থেকে হাটু নামিয়ে ফ্লোরে পা ছড়িয়ে উত্তর দেয়,
– হ্যাঁ বাবা। ওই মানুষটা একদম ভালো নেই।উনি প্রচুরপরিমাণে পরিশ্রম করছেন। আজ নয়তো কাল এমন অবস্থায় পরে যাবেন তখন উনার সেবা করার জন্য আর কেউ থাকবেনা।
পূর্ণতার ব্যকুল অবস্থা দেখে কবির কিছুক্ষন নিজের মনে চিন্তা করলেন। এরপর পকেট থেকে ফোন বের করে পূর্বের নাম্বারে কল বসিয়ে লাউড স্পিকার অন করলেন। পূর্ণতা চটপট করে চোখ মুছে একবার বাবার দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার ফোনের টুট টুট কলের দিকে। মৃদ্যু আলোর পরিবেশে হঠাৎ কট করে একটা শব্দ হয়ে গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
– আসসালামুয়ালাইকুম, বাবা। কেমন আছেন?
কবির মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, পূর্ণতা উন্মুখ দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। ফোনের বিপরীতে প্রচুর গাড়ি চলাচলের শব্দ হচ্ছে। পূর্ব সম্ভবত বাইরে আছে। কবির সৌজন্য গলায় বললেন,
– পূর্ব বাবা, আমার মেয়েটা ভালো নেই। কোনো বাবা মেয়ের খারাপ অবস্থা দেখার পর ভালো থাকতে পারেনা।
পূর্বের উত্তর শোনার জন্য প্রচণ্ড উদগ্রীব হয়ে আছে পূর্ণতা। পূর্ণতাকে অগ্রাহ্য করলেও বড়দের অগ্রাহ্য করার ভুলটা পূর্ব কখনো করেনা। পূর্ব তার ঠাঁট বজায় রাখা কন্ঠে বললো,
– আপনি আমাকে মাফ করবেন বাবা। কিন্তু সমস্যাটা আপনার মেয়ের মধ্যেই। তাকে ঠিক করে জিজ্ঞেস করুন মূল সমস্যাটা কি এবং সেটা কোথায়। আমাকে কল দিয়ে আপনি কোনো উত্তর পাবেন না। আমি একটু ব্যস্ত আছি। আমাকে মাফ করবেন।
পূর্বের কাটকাট জবাব শুনে কবির খুব কৌতুহল বোধ করলেও পূর্ণতা এদিকে জিদের রেশ আরো প্রবল করলো। সে ঠিক করলো আর নিজেকে সস্তা বানাবেনা। যেচে গিয়ে পূর্বের সামনে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করবেনা। পূর্বের এই কঠিন জবাবের মূল মর্ম এটাই ছিলো, পূর্ণতা ওর কেউ না। পূর্ণতা থাকুক বা না-থাকুক এতে পূর্বের চুল পরিমাণও আসে-যায় না।
.
দিন পেরিয়ে রাত। রাত পেরিয়ে দিন। সময়ের গন্ডি এভাবেই পার হচ্ছিলো দিনকে-দিন। পূর্ব নিজের ইলেকশনের প্রচারণার জন্য সকলের কাছে মুখিয়ে আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী ইবরাহিম খান পূর্বের হৈচৈ সমাচার দেখে হিংসায় জ্বলেপুড়ে গেলেও চুপ করে থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারছিলেন না। পূর্বের পার্টিও পূর্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পার্টির মুখ্যমন্ত্রী গোলাম আজাদও পূর্বের প্রতি জনগণের বিপুল সমাগম দেখে বাহ্বা জানিয়ে বিশেষ বার্তায় শুভকামনা পাঠিয়েছে। টিভির পর্দায় নিবার্চনের খবর যেনো সর্বেসর্বায় বিস্তার লাভ করেছে। জনতাও কাঙ্ক্ষিত দিনটির জন্য অপেক্ষায় কাটাচ্ছে। পূর্ণতার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষাও শেষ। এখন রেজাল্ট দেওয়ার পালা। পূর্ণতা নিজের নরম ব্যক্তিসত্ত্বার খোলস পাল্টে কঠিন ব্যক্তিত্বের রণরূপ নিয়েছে। পূর্বের জন্য আর সে উদাস হয়ে থাকেনা। না খেয়ে নিজের শরীরে দূর্বলতা বাধায় না। একপলক দেখার জন্য আগের মতো কাতরায় না। পূর্ণতার কঠোর রূপ দেখে খোদেজাও অবাক হয়ে গেছেন। কবির এর মধ্যে পূর্বের সাথে গোপনে কয়েকবার দেখা-সাক্ষাৎ করলেও পূর্ব তার এককথায় অনড়! আগে খোদেজাকে বলুন শর্ত তুলে নিতে নয়তো মেয়েকে বলুন মায়ের আচঁল ছেড়ে আমার কাছে আজীবনের জন্য চলে আসতে। পূর্ণতা এইবার যদি পূর্বের কাছে ফিরে আসে তাহলে সে কখনো মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবেনা। এমনটাই জানিয়েছে পূর্ব। এতোদিন পূর্ব ভাবতো, হয়ো পূর্ণতা খোদেজার কাছে বেশিদিন থাকতে পারবেনা। একপ্রকার অধিকার খাটিয়েই সে পূর্বের কাছে ফিরে আসবে। সেদিন যেভাবে জিদ দেখিয়ে বাঙলো বাড়িতে পূর্বের এক্সিডেন্টের সময় এসেছিলো ঠিক সেভাবেই পূর্ণতা আবারও ফিরে আসবে। কিন্তু পূর্ণতা ফিরেনি। আর ফিরেনি পূর্বের ওই কথা শোনার পর। ‘ মূল সমস্যা ‘ দ্বারা পূর্ণতার নিঃস্ব অবস্থার কথাটা পূর্ব যেভাবে ঠাসঠাস করে জবাব দিয়েছিলো, সেটা শোনার পর থেকে একমাত্র আত্মসম্মানহীন মেয়েই ওর কাছে বেহায়ার মতো ফিরবে। ওয়াসিফ পূর্ব যথেষ্ট ভালোই আছে, আর জীবনেও পূর্বের জন্য চিন্তা করবেনা সে। এখন থেকে নিজেকে যোগ্য প্রমাণের সঠিক যুদ্ধ লড়বে এবং দেখিয়ে দিবে ভালোবাসার কাঙাল হলেও নিজের আত্মগরিমায় দাগ লাগানো অবশ্যই পূর্ণতার পছন্দ না। এক অদ্ভুত জিদের বশে বশীভুত ছিলো পূর্ণতা। যেখানে আয়মান, খোদেজা, কবির, আয়েশা… কারোর কথাই সে কোনোরূপ কানে তুলেনি। খোদেজা একপর্যায়ে ডিভোর্সের কথা তুললে পূর্ণতা খোদেজাকে কথা শোনাতে একটুও চিন্তা করেনি। মনের সবপ্রকার জিদ মিলিয়ে ইচ্ছেমতো শুনিয়েছে খোদেজাকে। সেই সাথে পূর্বকে নিয়ে হাজার কটুক্তির মোক্ষম জবাবও পাইপাই দিয়েছে। খোদেজা সেদিন বাকরুদ্ধ হয়ে বাসায় ছিলেন, আর হাসপাতালে যাওয়ার মনোবল খুজেঁ পাননি।
আয়মান শিকদারের ভার্সিটি জীবন স্বল্প বিরতিতে কাটলেও নতুন ঝামেলা যুক্ত হয়েছে। সবে আয়মান নতুন চাকরিতে জয়েন করতেই ওর মা আফিয়া বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। ছেলেকে উনি বিয়ে করাবেই, তা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব। নাতী-নাতনীর মুখ দেখার জন্য ছটফটও বোধ করেন আফিয়া। এদিকে আয়মান না পারছে বাড়িতে একমিনিট বিশ্রাম নিতে, না পারছে শান্তিমতো একটু রিল্যাক্স হতে। উভয় দিকেই সংকট। নিজেকে রিফ্রেশ করতে সে একটা ছোট্ট শেডিউল ঠিক করলো। বাসা থেকে দূরে ভার্সিটির কাছে একটা আভিজাত্য কফিশপ হয়েছে, সেখানে নিরিবিলি কিছু সময় একাকী গুজরান করবে। যেই ভাবা সেই কাজ করতে আয়মান দ্রুত সাদা শার্ট গায়ে দিলো। কালো প্যান্ট পরে হাতে ফার্স্টট্র্যাক ব্রান্ডের কালো ঘড়ি পরলো। মিররের সামনে দাড়িয়ে শার্টের বোতাম খুলা অবস্থায় বুকে প্রোফেশনালদের মতো স্প্রে করে নিলো। সুন্দর করে শার্টের হাতা ফোল্ড করে চুল ব্রাশ করে নিলো সে। পকেটে বাইকের চাবি ও হাতে মোবাইল নিয়ে তড়িঘড়ি করে রওনা দিলো। রেস্টুরেন্টে বসে সবার প্রথম ক্যাপোচিনো অর্ডার করলো আয়মান। বড় লম্বা মগের পানীয়ের উপর লাভ শেপের মতো ডিজাইন দিয়েছে। আয়মান সেটা দেখে ঠোঁটের কোণে সুক্ষ হাসির ভাঁজ ফেললো। দুহাতের ভেতর মগ আকড়ে গরম গরম ক্যাপোচিনোতে চুমুক বসালো। এসির শান্ত পরিবেশে বেশ আরাম লাগছে আয়মানের। একটু বিলাসবহুল বিধায় রেস্টুরেন্টে খদ্দের সংখ্যা নগন্য। আয়মান কাঁচের স্বচ্ছ দেয়াল গলিয়ে বাইরের ব্যস্ত সড়কে দৃষ্টি ফেললো। বিকেলের মেঘগুচ্ছ গোলাপী আভার আকাশে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সড়কে নজর পরতেই ওর চোখদুটো আটকে গেলো। হতবিহ্বল দৃষ্টিতে আশ্চর্য হয়ে ঠোঁটের কাছ থেকে এমন ভঙ্গিতে ধীরেধীরে মগটা নামালো, যেনো বাইরে নেপালের ভূমিকম্প হচ্ছে। আয়মান কপাল কুঁচকে সজাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো বাইকে বসা একটা বখাটে ছেলে একটা মেয়ের সাইডব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে চোখের পলকেই মেয়েটার হাতে ছুড়ি চালালো ওই ছিনতাইকারী! মেয়েটা ব্যথায় ‘মাগো..’ বলে চিৎকার দিতেই বখাটে ব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে বাইক ছেড়ে দিলো। মেয়েটা হাতের কবজি আকড়ে ব্যথায় চোখেমুখে অন্ধকার দেখছে যেনো! আশেপাশে কোনো মানুষজন এতোক্ষন হা করে দৃশ্য দেখলেও মেয়েটার ককিয়ে উঠা চিৎকারে ভিড় করে ফেললো। আয়মান ওইটুকু দৃশ্য দেখার পর নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। তাড়াতাড়ি উঠে তিনশো টাকার কফিতে পাচঁশো টাকা বিল দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো! আয়মান ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই মেয়েটার দিকে চরম আশ্চর্য হয়ে চেচিয়ে উঠলো,
– মাই গড! তুমি ইন্জুর্ড হয়েছো সাবিহা?
সাবিহা চোখ ঘুরিয়ে শব্দ উৎসের দিকে তাকাতেই ঠোঁটে উল্টে হাউমাউ করে কেদেঁ দিলো। সাবিহার কান্না দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আয়মান। মানুষ আয়মানকেই এখন তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে দেখছে। আয়মান ব্যাপারটা ঠাহর করতে পেরে চকিতে সাবিহার দিকে আবার তাকালো। বাচ্চাদের মতো কাঁদলেও কবজির দিকে তাকালে বুকটা কামড়ে এলো যেনো! সেই একই দৃশ্য, একই কাটা জায়গা, একই রক্ত পড়ার মূহুর্ত! আয়মান খপ করে সাবিহার কাটা কবজিটায় শক্ত করে রুমাল চেপে ধরলো। আয়মান অস্থির উঠেছিলো গলগল করে রক্ত পরার দৃশ্য দেখে। পাগলের মতো ভিড় সরিয়ে সাবিহাকে জোরপূর্বক হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু সাবিহা সেই বাধভাঙ্গা কান্নাতে তোতলাতে তোতলাতে বললো,
– আআমার ককাছে কোনো টাটাকা নেই ভাইয়া..
আয়মান ঠাস করে একটা চড় মারে সাবিহার গালে। সাবিহা গালে হাত দিতেও যেনো ভুলে গেছে এমন ভঙ্গিতে হতবাক আছে। এদিকে প্রচণ্ড রাগে গজগজ করছে আয়মান! সে আর কিচ্ছু বলার উপায় না রেখে জোরপূর্বক সাবিহাকে টেনে হাসপাতালে আনে। পুরো হাত ভালোমতো ব্যান্ডেজ করানোর পর আয়মান ওকে বাসায় যেতে বলে। সাবিহা মুখ নিচু করে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে ধমকের সুরে চেঁচিয়ে ডাকে আয়মান,
– এ্যাই স্টপ!
সাবিহা মৃদ্যু ভঙ্গিতে কেঁপে উঠে পা চালানো থামায়। পিছনে ফিরে তাকালে আয়মান হেঁটে এসে ওর সামনে দাড়ায়। গমগম গলায় জিজ্ঞেস করে,
– এই অসময়ে এখানে কি করছিলে? তুমি কি জানোনা ভার্সিটির এরিয়ার কিভাবে চলা লাগে?
সাবিহা বুক ঠেলে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে আয়মানের দিকে ব্যথাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– আয়মান ভাইয়া, আমি আপনার মতো বড়লোক না।
উত্তরের অবস্থা দেখে মাত্রাতিরিক্ত রাগ উঠলো আয়মানের! সোজা প্রশ্নের ত্যাড়া উত্তর দেখে ঠাস করে আরেকটা চড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছিলো ওর। শুধু হাতের দিকে একবার তাকিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,
– আমার বড়লোক হওয়ার সাথে তোমার এই ব্যাপারের সম্পর্ক কি? আমার সাথে তুমি ইয়ার্কি করো? গাল লাল করে দিবো ফাজিল মেয়ে! সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করে আমাকে ত্যা…
আয়মানের বলার আগেই সাবিহা নিচু কন্ঠে বলে উঠে,
– আমি এখানে টিউশনি করাই ভাইয়া। টিউশনির জন্য প্রতিদিন হোস্টেল থেকে এখানে হেঁটে আসা লাগে। আজও এসেছিলাম।
– ব্যাগটাকে কামড়ে ধরেছিলো কেন? ওই ব্যাগটা যদি তখনই ছেড়ে দিতে আজ কবজিতে কাটা পরতো না।
সাবিহা অশ্রুপূর্ণ চোখে মাথা তুলে আরেকবার আয়মানের ক্রোধদৃষ্টির দিকে তাকালো। আয়মানের চোখেমুখে ভীষন রাগ দেখা যাচ্ছে। সাবিহা তৎক্ষণাৎ চোখ ফিরিয়ে মাটির দিকে দৃষ্টি রেখে উত্তর দিলো,
– ব্যাগে আমার টিউশনির টাকা ছিলো ভাইয়া। ওগুলো না পেলে আমি শেষ হয়ে যাবো।
সাবিহার শরীর মৃদ্যুতালে কাঁপছে। কান্না আটকানোর চেষ্টায় চোখ নিচু করে অশ্রু ঢাকতে চাইছে। আয়মান তখন কঠিন অবস্থা থেকে স্বাভাবিক হলো। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– কত টাকা ছিলো ব্যাগে?
সাবিহা উত্তর দিতে গিয়ে কান্নার জন্য আবারও কথা গুলিয়ে ফেলেছে। মাথাটাও উপরে তুলে কথা বলছেনা। আয়মান আবারও শান্ত সুরে অভয় দিয়ে বললো,
– বলো ব্যাগে কত টাকা ছিলো? খুব বেশি এমাউন্ট ছিলো?
সাবিহা কিছুক্ষন সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
– চার হাজার।
আয়মান ওর মুখ থেকে উত্তরটা শুনতেই ব্যস্ততার সাথে প্যান্টের ব্যাক পকেট থেকে কালো ওয়ালেটটা বের করলো। ওয়ালেট খুলে কিছু টাকা নিয়ে সাবিহার দিকে এগিয়ে বললো,
– টাকাটা রাখো।
সাবিহা মাটি থেকে চোখ তুলে কান্নার হিড়িকে হাতের দিকে তাকালো। হাতে একহাজার টাকার অনেকগুলো চকচকে নোট। সাবিহা এবার আয়মানের চোখের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– আপনি আমাকে টাকা কেনো সাধছেন আয়মান ভাইয়া? আমি এই টাকা নিবো না। আমার বেতনের টাকা তো ওই লুচ্চাটা ছিনতাই করেছে। আপনি প্লিজ টাকাটা রেখে দিন। আমি নিবো না।
আয়মান নিজের গম্ভীর এটিটিউট ফর্মে কিছুক্ষণ ডান ভ্রু চুলকে বললো,
– থাবড়া খাবা?
– জ্বী? , সাবিহার কৌতুহলজনিত প্রশ্ন।
সাবিহার ওই মুখ দেখে ফিক করে হেসে দিলো আয়মান। কি কারনে হাসলো সে নিজেই জানেনা। সাবিহা ওমন হা করে পিটপিট করে তাকিয়ে থাকলে সাথেসাথে আয়মান নিজেকে আগের মতো কঠোর বানিয়ে মুখ শক্ত করে বলে,
– বললাম থাপ্পর খাবে সোনামনি? যাইহোক! লেট ইট গো। চুপচাপ টাকাটা দিচ্ছি, চুপচাপ টাকাটা রাখো। পরে হিসাব মতো আমার কাছে পরিশোধ করে যাবে।
আয়মান জোর করে হাবলার মতো দাড়িয়ে থাকা সাবিহার হাতে দশটা একহাজার টাকার নোট গুঁজে বাইক ছুটিয়ে চলে গেলো। সাবিহা কি প্রতিক্রিয়া দিবে ভেবে পাচ্ছিলো না।হাতের মুঠোয় চকচকে এতোগুলো নোটের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। এই মানুষটা কোথাও যেনো গভীরভাবে দাগ কেটে দেয়। চট করে গালে হাত রাখলো সাবিহা। আবারও দৃষ্টি দিলো শূন্য রাস্তার দিকে যেখানে বাইক দিয়ে আয়মান চলে গেছে। আচমকা ঠোঁটে ঠোঁট টিপে হেসে দিলো সাবিহা। বুক ভরে দীর্ঘ নিশ্বাস টেনে ছেড়ে দিলো হাসিমুখে। টাকাটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ফুটপাত দিয়ে হাটতে হাটতে আনমনে আয়মানের মুখটা স্মরণ করছিলো সে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখবন্ধ করলে ভেসে বেড়ায় সেই দৃশ্য। সাবিহা অজান্তেই কেনো জানি হেসে দিলো। আকাশে তাকিয়ে দেখলো, সন্ধ্যার বেগুনি আকাশে নীড়ের খোঁজে পাখি চলে যাচ্ছে। মনেমনে সাবিহা প্রিয় লাইনগুলো গুনগুনিয়ে সুর তুলছিলো,
আজ কল্পনায় বাস্তবতায়
তোকে ঘিরে,
আজ মেঘের গান গেয়ে যাই
তোর প্রতিক্ষনে।
.
পূর্ণতা এখন কবিরের কিনে দেওয়া নতুন গাড়িতে ঘোরাফেরা করে। ড্রাইভারটা কবিরের বিশস্ত লোক এবং পূর্ণতার পাশে সবসময় নূরানী থাকে। পূর্ণতা একা কখনো গাড়ি নিয়ে বের হতে পছন্দ করেনা। নিজের একাকীত্বের সময়গুলো সে চুপচাপ ঢাকা শহরের অলিগলিতে ঘুরে বেড়ায়। নিজের ইচ্ছায় এখন সে বাবার ব্যবসায় টুকটাক ম্যানেজমেন্টের কাজটা দেখছে। এতে কবির প্রচণ্ড খুশি হয়েছে। আজ বাবার সাথে দুপুরটা কাটিয়ে পড়ন্ত বিকেলে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে পূর্ণতা। নূরানীকে আনেনি আজ। ড্রাইভারকে বলে দিয়েছে যেদিকে চোখ যায় সেদিকে গাড়ি নিয়ে যেতে কিন্তু একই রাস্তায় টার্নব্যাক করা যাবেনা। সিটে পিঠ ঠেকিয়ে জানালার বাইরে দৃষ্টি দিয়ে পাখিদের উড়াল দেখছে পূর্ণতা। পি পি করে যানবাহনের বিকট হর্ণ বাজলেও সেদিকে খেয়াল নেই ওর। আপনমনে আকাশ দেখতে দেখতে হঠাৎ সন্ধ্যার তিমির নামলো। এদিকে রাস্তায় রাস্তায় চারপাশ ঘিরে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার টাঙানো। একহাত উঁচু করে আর্দশ স্টাইলে এক ভদ্রলোকের হাসিমুখ দেখা যাচ্ছে ছবিতে। পড়নে পান্ঞ্জাবী ও চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। এই লোকটার বক্তব্য টিভিতে অনেকবার দেখেছে পূর্ণতা। এই লোক পূর্বের অপজিট দলের প্রার্থী হিসেবে লড়ছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো কোথাও পূর্বের নামে সামান্য লিখাটুকুও নেই। জানালার কাছ ঘেঁষে বসলো পূর্ণতা। এখন সে পূর্বের এলাকায় রয়েছে। আর দশমিনিট গেলেই ওয়াসিফ ভিলা এসে পরছে। কিন্তু কোথাও পূর্বের নিবার্চন ঘিরে বিন্দুমাত্র পোস্টার নেই। অথচ ওই লোকের পোস্টার কারেন্টের থাম্বায়, উঁচু স্তম্ভে, তারে সারিবদ্ধ ভাবে ছড়াছড়ি অবস্থায় দেখেছে। পূর্ণতা কৌতুহল গলায় ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো,
– চাচা নির্বাচনী এলাকায় এসে চমক খেলাম।
ড্রাইভার বৃদ্ধ মানুষ। তিনি নরম কন্ঠে বললেন,
– কি দেখে মা?
– ওইযে টিভিতে দেখেন না ওয়াসিফ পূর্ব নামে একজন তরুণ মানুষ নির্বাচনে দাড়িয়েছে? তার এলাকায় কোনো পোস্টার যে দেখা যাচ্ছেনা।
ড্রাইভার স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে হাসি গলায় বললো,
– আপনি শুনেননি ওই ছেলের কথা? এগুলো লাগালে নাকি পরিবেশ দূষণ হয়। এজন্য দলের সবাইকে বলে দিছে এসব না লাগাতে। যদি জনগণ তাকে ভালোবাসে এমনেই ভোট দিয়ে আসবে
– ও..
ঠোঁটে চোখা করে শব্দ ছেড়ে পূর্ণতা আবার জানালার বাইরে তাকালো। দুনিয়ার সবকিছু নিয়ে পূর্ব চিন্তা করছে কিন্তু যাকে ‘ভালোবাসি’ বললো তার কোনো খোঁজই রাখেনা। পূর্ণতা আনমনে হেসে দিয়ে ড্রাইভারকে বললো,
– কি মনেহয় চাচা? এলাকায় এবার যুবক আসবে? ওই পূর্ব কি জিতবে?
– জিতার সম্ভাবনাই বেশি। বয়স কম হলেও এলাকায় যা যা করছে ওগুলো করেই ছেলেটা ভালোবাসা অর্জন করে ফেলছে। যদি নাও জিতে তাও মানুষ উনাকে ভালোবাসবো।
– কিন্তু আমার চোখে তো উনার এমন কোনো কাজ ধরা পরেনি। ওমন আহামরি কিছুই তো করতে দেখলাম না।
– মা, পূর্ব তো গতানুগতিক কাজ করেনা।
– মানে? , চকিতে প্রশ্ন ছুড়লো পূর্ণতা।
– পূর্বের একটা দলই আছে। যেইটা সমাজের কিছু মানুষের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়। ধরো, কেউ যদি চিকিৎসা করাতে চায়, ওদের দল এমন ব্যবস্থা করে দেয় যেখানে এক পয়সাও লাগেনা। বড় বড় হাসপাতালে অভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে ব্যবস্থা করায়। এই খরচের টাকা সব পূর্ব দেয়। ওদের কি বিশাল বাড়ি দেখছো না টিভিতে? আবার পারিবারিক ব্যবসা থেকেও ওদের ইনকাম আসে।
– ওহ্।
পূর্ণতা মুখ ঘুরিয়ে জানালার কাচঁটা একটু নামিয়ে দিলো। সামান্য ফাক দিয়ে দমকা হাওয়া ঢুকলো। ঢাকা শহরে এখন মৃদ্যু শীতের আভাষ পাওয়া যাচ্ছে। রাতের দিকে বেশ ঠান্ডা নামে। ওই সময় বাইরে তাকালে কুয়াশায় কিচ্ছু দেখা যায়না। পূর্ণতা গায়ের পাতলা শালটা আষ্টেপৃষ্টে আকড়ে ধরলো। রাত এখন রাতটার বেশি। এই রাস্তায় গাড়ির চলাচল কিছুটা কমে আসছে এখন। হঠাৎ চোখের সামনে দিয়ে আলোয় আলোকিত দম্ভের মতো দাড়িয়ে থাকা ‘ওয়াসিফ ভিলা’ পেরিয়ে গেলো। ধুকপুক ধুকপুক করে কাপছে। হাত কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে। কেনো হচ্ছে? কোন আশায় মন ছটফট ভাব দেখাচ্ছে? কার দর্শনের জন্য আকুলিবিকুল করছে? সামনা সামনি আরো একবার কি দেখা হবে? লোকাল বাসে ভূতের মতো যেভাবে দেখা দিয়েছিলো আজ কি সুপারম্যানের মতো অদ্ভুতকাণ্ড দেখাতে পারেনা? মনের অগোচরে বুকের ভেতর পূর্ব-পূর্ব করে যন্ত্রটা লাফাচ্ছিলো। যতক্ষণ গেটের সেই আলোগুলো দেখা যাচ্ছিলো ততক্ষণ পূর্ণতা তাকিয়ে ছিলো। গাড়ি আরেকটু এগিয়ে গেলে জোরে নিশ্বাস ছাড়লো পূর্ণতা। এই বেহায়া মন কবে শুধরাবে? আর তোকে ও পাত্তা দিবেনা! পূর্ব নিজের জীবন সুন্দর করে গুছিয়ে ফেলেছে। এখন ভোট হবে, ইলেকশন জিতবে, এমপি হয়ে শত মেয়ের মধ্য থেকে সবচেয়ে সুন্দরীকে বেছে নিবে। তোর কাছে মন ও শরীরের ধন-দৌলত ছিলো সেটা পূর্বের প্রাপ্য হয়ে গেছে। যদি ও তোকে ভালোবাসতো তাহলে শর্ত ছাড়াই কোলে তুলে নিয়ে যেতো। কাউকে পরোয়া করতো না। পূর্ণতা এসব ভাবতেই ভাবতে হঠাৎ আট-দশজন ছেলের একটা দলবল দেখতে পেলো। বেখেয়ালে সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে সামনে তাকালে হঠাৎ চোখ বড় বড় করে জানালার দিকে ঝাঁপিয়ে পরে উচ্চকন্ঠে চেচাতে লাগলো,
– চাচা থামান, থামান!! চাচা থামান প্লিজ!!
ড্রাইভার দুম করে ব্রেক কষে পিছু ফিরে তাকালে পূর্ণতা সাথে সাথে নিজের বেহায়া মনকে শান্ত করে জানালা থেকে সরে বলে,
– একটা বিড়াল গাড়ির নিচে চাপা পরতে নিচ্ছিলো চাচা। আপনি গাড়ি স্টার্ট দিন।
গাড়িটটা আবার জড়তা ভেঙ্গে চলতে শুরু করে। পূর্ণতা হাত মুঠো করে চোখ খিচে নিজেকে শক্ত করছে। আজ নিজের আবেগের কাছে হার মানবেনা, মানে মানবেনা। ওই স্বার্থপর মানুষ ওইভাবেই থাকুক! আর কখনোই যেনো চোখের সামনে না আসুক। বিড়বিড় করে মনে আওড়াতেই পূর্ণতা বাসায় ফিরে এলো। নূরানী ছাড়া আজও কেউ নেই। ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে ও আর খাওয়া দাওয়া করলো না। দরজা চাপিয়ে নূরানীকে ঘুমাতে বলে শুয়ে পরলো পূর্ণতা। দশটার দিকে শহরের বুকে প্রবল বেগে বৃষ্টি শুরু হলো। মূলত শীত নামানোর জন্যই আকস্মিক বৃষ্টির আগমন। ফ্যানের নিচে পাতলা কাথায় ঘুমানো যাচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে কম্বল মুড়িয়ে শুলো পূর্ণতা। বারবার মনেহচ্ছে পূর্ব আসবে। ওর সাথে যতবার অনাকাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎ হয়েছে, পূর্ব নিজের দ্বিতীয় দেখাটা সাংঘাতিক ভাবে দিয়েছে। এখনো লিফটের ঘটনাটা মনে পরলে লজ্জায় কুকড়ে যায় পূর্ণতা। ঠোঁটের উপর সেটাই ছিলো সবচেয়ে দীর্ঘতম অত্যাচার। বৃষ্টি যেভাবে পরছে কোনো সজ্ঞানে থাকা মানুষ অন্তত বাইরে বের হবেনা। কিন্তু মানুষ যা করে, পূর্ব তার বিপরীতটা করতে প্রচণ্ড ভালোবাসে। যদি আজ পূর্ব আসে তাহলে কি লিমিট ক্রস করে ফেলবে?
পূর্ণতার এলোমেলো চিন্তাভাবনায় বিশাল ছিদ্র করে হঠাৎ দরজায় কেউ ধাম ধাম করে ধাক্কাচ্ছে। পূর্ণতা চমকে গিয়ে হড়বড় করে কম্বল ছিটকে উঠে বসে। দুই হাতের শক্ত থাবা দরজার কাঠে ভয়ংকর ভাবে পরছে। খুবই হিংস্ররূপে শব্দ হচ্ছে। এখন তাহলে কে এসেছে? কে?
-‘ চলবে ‘
#FABIYAH_MOMO
( নোট : রিচেক দেওয়ার সময় হয়নি। )
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক