#ভ্যাম্পায়ার বর পর্ব ২
#M_Sonali
ক্লাস শেষে
বাইরে বেরিয়ে শ্রাবনী আর মিতুকে উদ্যেশ্য করে চাঁদনী বললো
— ঐ পেত্নীর দল চলতো এখন গিয়ে ঐ শ্রাবন নাকি প্লাবন তাকে খুঁজি। বেচারার আমার কাছে একটা ধন্যবাদ পাওনা আছে, আমি আবার ঋন থাকতে পছন্দ করিনা।
চাঁদনীর কথা শুনে পাশ থেকে শ্রাবনী বললো
— আহারে আমার দয়ার সাগর রে। এমন করে বলছিস যেনো তুই ঐ শ্রাবনকে ধন্যবাদ দিয়ে একেবারে বড় লোক বানিয়ে দিবি হুহহ। আরে ঐ লোকটা তোর জীবন বাচিয়েছে জীবন, তোর উচিৎ ওনাকে সম্মান দিয়ে কথা বলা ফইন্নি একটা।
— ঐ শাঁকচুন্নি তুই আমায় কি বললি। আরে আমার মতো দয়ার সাগর এই কলেজে একটাও পাবি? আরে এই চাঁদনীর কাছ থেকে একটা ধন্যবাদ পাওয়া মানে বিশ্ব জয় করা বুঝলি। অবশ্য তোর মতো গোবর মাথায় এসব ঢুকবে না যাহ ভাগ।
— আরে তোরা একটু থামবি নাকি? যখন তখন ঝগড়ায় নেমে পরিস। বলি এত ঝগড়া করতে তোদের কেমন লাগে বলতো?(বললো মিতু)
মিতুর কথা শুনে শ্রাবনী আর চাঁদনী এক সাথে বলে উঠলো
— ওরে আইছেরে আমাদের নম্র ভদ্র লেজ বিশিষ্ট বান্দরনি। বলি ঝগড়া কি শুধু আমরাই করি তুই করিস না?
— উফফ তোদের বোঝানো মানে নিজেকে বাশ দেওয়া। আচ্ছা বাদ দে এখন চল শ্রাবন ভাইয়াকে খুঁজি।
মিতুর কথা শুনে চাঁদনী ভ্রু কুচকে বললো
— ঐ এক মিনিট এক মিনিট, এই শ্রাবন তোর ভাইয়া হলো কি করে? আর তোর কোনো ভাই আছে আগে তো জানতাম না? নাকি উনি তোর কাজিন?
চাঁদনীর কথা শুনে মিতু অসহায় গলাম বললো
— আপনার পায়ে পরি দুষ্টুপাখি আমার বড় ভুল হয়ে গেছে ওনাকে ভাইয়া ডেকে। দয়া করে এখন এটা নিয়ে বিশ্লেষণ করতে বসবেন না। শ্রাবন আমাদের সিনিয়ার তাই ভাইয়া বলেছি বুঝলি?
— হুমম বুঝলাম এখন বক বক না করে চল ঐ শ্রাবনকে খুঁজি।
চাঁদনীর কথা শুনে মিতুর রাগ হলেও কিছু বললো না। কারন ও জানে এই দুষ্টুপাখিকে কিছু বলে লাভ হবে না।
তারপর তিন বান্ধবী মিলে একটু সামনে এগিয়ে যেতেই শ্রাবনকে দেখতে পেলো, ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলে ফোনটা পকেটে রেখে গেটের দিকে চলে যাচ্ছে। শ্রাবনকে দেখেই চাঁদনী পিছু ডাক দিলো
— এই যে মিস্টার শুনছেন? ও হ্যালো শুনছেন আপনাকে ডাকছি। আরে শ্রাবন ভাইয়া আপনার সাথে একটু দরকার ছিলো একটু দাঁড়ান?
চাঁদনী চিৎকার করে ডাকছে কিন্তু শ্রাবনের তাতে কোনো হেলদল নেই, সে আগের মতোই হেটে যাচ্ছে। এটা দেখে রাগ উঠে গেলো চাঁদনীর। চাঁদনী রাগে গজগজ করতে করতে বলে উঠলো
— আব্বে ঐ শ্রাবইন্না ব্যাটা কান কাটা বাদুর কানে কি হাতি গুঁজে রাখছিস নাকি। ডাকলে শুনিস না?
চাঁদনীর কথা শুনে থেমে গেলো শ্রাবন। তারপর হাতের মুঠ শক্ত করে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো সেখানেই। শ্রাবনকে দাড়াতে দেখে চাঁদনী মিতু আর শ্রাবনীকে রেখেই দৌড়ে শ্রাবনের সামনে চলে গেলো। তারপর কোমড়ে হাত রেখে রাগি গলায় বললো
— এই জন্যেই কারো সাথে বেশি ভালো আচরন করতে হয়না। বেশি সম্মানও দিতে হয়না। ভালো করে কতবার ডাকলাম তখন আপনার কানে গেলো না। আর এখন একটু ত্যাড়া ভাবে ডাকতেই থেমে গেলেন। আচ্ছা শুনেন যে জন্যে ডেকেছি, আপনি আমার কাছে একটা ধন্যবাদ পাইতেন তাই ধন্যবাদ আমায় বাঁচানোর জন্যে হুহহ।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো চাঁদনী। চাঁদনীর কথা শুনে হুডিটা তুলে চাঁদনীর দিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখলো শ্রাবন। তারপর শব্দ করে বাকা হেসে চাঁদনীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। শ্রাবনের এমন আচরনে চাঁদনী যেনো অবাক ও রাগের শির্ষে পৌঁছে গেলো। ততক্ষণে শ্রাবনী আর মিতু চাঁদনীর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
— কত্ত বড় সাহস ঐ প্লাবইন্নার ঘরের শ্রাবইন্নার। আমাকে এই চাঁদকে ইগনোর করে। আমার মুখ থেকে ধন্যবাদ শুনেও আমায় কিছু না বলে চলে গেলো। ব্যাটা হুতুমদুমার ঘরের হুতুমদুমা। তুই এখনো এই দুষ্টুপাখির দুষ্টুমির শিকার হোস নাই। তাই জানিস না আমি কি। তোকে তো আমি কালকে দেখে নিবো রেডি থাক ব্যাটা কান কাটা ধলা চিকা।
চাঁদনীর কথা শুনে শ্রাবনী আর মিতু পাশে থেকে হাসতে হাসতে শেষ। ওদের হাসি দেখে চাঁদনীর রাগটা যেনো সপ্তম আসমানে পৌঁছে গেলো। চাঁদনী আশেপাশে খুঁজতে খুঁজতে একটা কুঞ্চী তুলে নিলো। তারপর রাগি গলায় বললো
— ওরে হারামি শাঁকচুন্নির দল ঐ শ্রাবইন্না আমায় ইগনোর করলো আর তোরা সেটা দেখে মজা নিচ্ছিস। তোদের আজকে আমি কুচি কুচি করে কেটে পিঁপড়াকে খাওয়াবো।
কথাগুলো বলেই শ্রাবনী আর মিতুর দিকে ধেয়ে আসতে লাগলো চাঁদনী আর চাঁদনীকে আসতে দেখে হাসতে হাসতে দৌড়াতে লাগলো মিতু আর শ্রাবনী।
,
,
রাত ১২.০০ টা
দুজন বন্ধু সিনেমা হলে সিনেমা দেখে গল্প করতে করতে বাসায় ফিরছে। বেশ খানিকটা পথ আসার পর ওদের মনে হয় ঝোপঝাড়ের ভিতর থেকে কোনো মেয়ের কান্নার শব্দ আসছে। কিন্তু এত রাতে কান্না করছে কে?
— দোস্ত এত রাতে ঐ ঝোপঝাড়ের ভিতর বসে কান্না করছে কে বলতো?
— আমিও তো সেটাই ভাবছি দোস্ত। হয়তো কোনো মেয়ে পথ হাড়িয়ে ফেলে বিপদে পড়েছে। পাহাড়ি অঞ্চল হাড়াতেই পারে।
— হুমম ঠিকি বলছিস, চল গিয়ে দেখি কে কান্না করছে।
কথাগুলো বলেই দুই বন্ধু মিলে ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে ঝোপের ভিতর এগিয়ে যেতে থাকে। বেশ অনেকটা চলে এসেও কারো কোনো চিন্হও পায়না ওরা। যত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ততো যেনো শব্দটা দুরে চলে যাচ্ছে।
— দোস্ত অনেকটা ভিতরে তো চলে এলাম। কিন্তু যত ভিতরে যাচ্ছি ততো মনে হচ্ছে কান্নার শব্দটা দুরে চলে যাচ্ছে। আমার না বিষয়টা কেমন সুবিধার ঠেকছে না। চল আমরা ফিরে যাই।
— হ দোস্ত আমিও এটাই ভাবছি। এত রাতে আমাদেরই উচিৎ হয়নি ঝোপঝাড়ের মাঝে ঢোকা। চল চল জলদি ফিরে যাই।
কথাগুলো বলে যেই ওরা দুজন পিছনে ঘুরেছে তখনি দেখে ওদের চাইতে কিছুটা দুরুত্বে একটি মেয়ে বসে আছে সাদা কাপড় পড়া। আর সেই মেয়েটাই বসে বসে কান্না করছে। চুলের কারনে মেয়েটার মুখটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
মেয়েটাকে দেখে কেনো জানিনা কিছুটা ভয় কাজ করছে দুই বন্ধুর মনে।
— দোস্ত এই মেয়েটা এখানে এলো কখন একটু আগে তো ছিলোনা এখানে?
— হ দোস্ত আমিও সেটাই ভাবছি। ভয় পাস না চল তো গিয়ে দেখি কেনো কাঁদছে মেয়েটা?
তারপর আর কথা না বারিয়ে মেয়েটার কাছে গিয়ে দুই বন্ধুর মাঝের একজন বলে উঠলো
— এই যে শুনছেন? কে আপনি আর এখানে বসে এভাবে কাঁদছেন কেনো?
ছেলেটার কথা শুনেই মেয়েটা কান্না বন্ধ করে চুপ করে গেলো। কিন্তু কিছু বলছে না বা মাথাও তুলছে না মেয়েটা।
— কি হয়েছে আপনার এই এত রাতে একা একা ঝোপঝাড়ে বসে কান্না করছেন কেনো আপনি? আমাদের বলতে পারেন আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারি।
কথাগুলো বলতে বলতে হাতে থাকা ফোনের ফ্লাশ লাইটটা নিয়ে মেয়েটার কাছে এগিয়ে গেলো ওরা। তারপর মেয়েটার মুখের দিকে লাইট ধরতেই মেয়েটা ওদের দিকে মুখ করে তাকিয়ে একটা বিশ্রি হাসি দিলো। মেয়েটার মুখটা দেখতেই ভয়ে চিৎকার করে কয়েকটা পিছিয়ে গেলো ছেলে দুটো। যে মেয়েটা বসে কান্না করছিলো ঐ মেয়েটার মুখটা একদম ফ্যাকাসে ফর্সা আর চোখদুটো গাড়ো লাল টকটকে। চেহারাটা অনেক সুন্দর তবে ঠোট ভেদ করে দুই পাশ দিয়ে বেরিয়ে আছে শুচালো দুটা চিকন দাঁত। সাথে লেগে আছে মেয়েটার মুখে গা হিম করা ভয়ানক হাসি। মেয়েটার মুখ দেখেই ভয়ে চিৎকার করতে করতে সরে গেলো দুই বন্ধু আর তখনি পিছনে কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলো ওরা। সাথে সাথে পিছনে ঘুরে ফ্লাশলাইটের আলোটা ধরতেই দেখতে পেলো সেখানে দাড়িয়ে আছে আরো একজন যুবক। আর তারও মুখটা ধবধবে ফর্সা চোখ দুটো গাড়ো টকটকে লাল, সাথে ঠোট ভেদ করে বেরিয়ে আছে শুচালো ভয়ানক দাঁত।
ছেলেদুটো কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই পাশ থেকে মেয়েটা আর ছেলেটা আক্রমন করলো বন্ধু দুজনের ওপর। তারপর নিজেদের শুচালো দাঁত গুলো ঢুকিয়ে দিলো ছেলো দুটোর গলায়। আর জোকের মতো চুষে চুষে খেতে লাগলো ছেলেদুটোর শরীরের সমস্থ রক্ত। মুহুর্তের মাঝে ছটফট করতে করতে মারা গেলো ছেলেদুজন। ছেলে দুটার শরীরের সমস্থ রক্ত খাওয়া শেষ হলে ওদের নিথর রক্তশুন্য দেহদুটো ফেলে রেখে মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে উড়াল দিয়ে চলে গেলো ঐ ভয়ানক ছেলে মেয়ে দুটো।
,
,
পরের দিন সকালে
ঘুম থেকে তারাতারি করে উঠে খুব দ্রুতো কলেজের জন্যে রেডি হয়ে নিচ্ছে চাঁদনী। চাঁদনীকে এত তারাতারি উঠতে দেখে আর কলেজের জন্যে রেডি হতে দেখে ওর মা যেনো আকাশ থেকে পরলো।
— বলছি যে চাঁদ তোর শরীর ঠিক আছে তো? মানে তুই সুস্থ আছিস তো মা?
— এমন আজব কথার মানে কি আম্মু, আমি তো সশরীরে সুস্থ ভাবে তোমার সামনে দাড়িয়ে আছি তাহলে আমি অসুস্থ হবো কোন সুখে শুনি?
— অসুস্থ না হলে তুই পাগল হয়ে জাসনি তো? যে মেয়েকে ঘুম থেকে তোলার জন্যে প্রতিদিন সকালে আমার একপ্রকার যুদ্ধ করতে হয়। সেই মেয়ে কিনা আজকে এত সকালে ঘুম থেকে উঠে কলেজের জন্যে রেডি হয়ে গেছে। ভাবা যায় বল এটা?
— ওহ আম্মু প্লিজ এমন আবোলতাবোল কথা বলে আমার সময় নষ্ট করোনাতো। তারাতারি কলেজে যেতে হবে সরো সরো।
— তা আমার মেয়ের এই পরিবর্তনের কারন টা কে তা কি জানতে পারি? নাকি আমার মেয়েটা কারো সাথে প্রেম করছে। যদিও এটা ভাবাটাই বোকামো হবে।
মায়ের কথা শুনে চাঁদনী রাগি গলায় বললো
— আচ্ছা আম্মু একটা কথা বলো তো? বলি আব্বু বিয়ের পর তোমায় সহ্য করতো কি করে আমি সেটাই বুঝিনা। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় আব্বু তোমায় পাগলাগারদ থেকে বিয়ে করে এনে পাগলা গারদের জনসংখ্যা কমিয়েছে।
— তবে রে কি বললি তুই ফাজিল মেয়ে। মায়ের সাথে ফাজলামো তাইনা। দাড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা।
কথাটা বলেই চাঁদনীর দিকে তেরে এলো ওর মা। আর চাঁদনী গিয়ে মায়ের গলা জরিয়ে ধরে বললো
— ওওও আম্মু রাগ করছো কেনো বলোতো। আমার আম্মু তো পৃথিবীর সেরা আম্মু। এখন আমায় তারাতারি কলেজে যেতে দাও প্লিজ। একজনকে আজকে মজা বুঝাবো আমি।
চাঁদনীর কথা শুনে ওর মা মুচকি হেসে চাঁদনীর কপালে চুমু একে দিয়ে বললো
— তা আজকে কার কপাল পুড়লো শুনি যে তার দিকে তোর দুষ্টুমির নজর পরেছে??
— সে অনেক কথা আম্মু পরে বলবো এখন আসি কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কথাটা বলেই বাইরের দিকে দৌড় দিলো চাঁদনী।
— আরে নাস্তা টা তো করে যা চাঁদ।
— ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবো আম্মু তুমি চিন্তা করো না। লাভ ইউ সুইটহার্ট।
কথাটা বলেই স্কুটার নিয়ে কলেজের জন্যে বেরিয়ে পরলো চাঁদনী।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
কয়েকজন পাঠক পাঠিকা নায়ক নায়িকার নাম চেঞ্জ করতে বলছিলেন। আর অনেকে আবার এই নাম দুটাই ও এই জুটিটাই বেশি পছন্দ করে। তাই নামটা আর চেঞ্জ করা হলো না।
আমি একটু অসুস্থ তাই পার্টটা বেশি বড় করতে পারলাম না। নেক্সট পার্টটা বড় করবো ইনশাআল্লাহ।