#ভ্যাম্পায়ার বর পর্ব ৩
#M_Sonali
সকাল ১০.৩০মিনিট
শ্রাবনের কোনো এক কারনে আজকে কেলেজে আসতে দেড়ি হয়ে গেছে। তাই তাড়াহুড়া করে কলেজের গেট দিয়ে ঢুকতেই এক বালতি ঠান্ডা পানি চাঁদনী ছুড়ে দিলো শ্রাবনের দিকে। কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে এক ফোটা পানিও শ্রাবনের গায়ে লাগেনি। বরং পানি লাগার অনেক আগেই হাওয়ার বেগে সেখান থেকে চাঁদনীর মুখোমুখি গিয়ে দাড়ায় শ্রাবন। এতটা দ্রুতো শ্রাবন গেছে যে চাঁদনী তা খেয়ালই করতে পারেনি। শ্রাবন সোজা গিয়ে চাঁদনীর মুখোমুখি দাড়িয়ে মাথার হুডিটা পিছন দিকে ফেলে রাগি লুকে তাকায় চাঁদনীর দিকে। শ্রাবনের চেহারার দিকে তাকিয়ে একদম হা হয়ে যায় চাঁদনী। ধবধবে ফর্সা গায়ের রং, হালকা লাল ঠোট, চোকা নাক এলোমেলো সিল্ক চুল। তবে চোখটা দেখা যাচ্ছে না কালো সানগ্লাসের কারনে।
শ্রাবনকে এতটা কাছাকাছি দেখে মুখের ভাষা যেনো হারিয়ে গেছে চাঁদনীর। চাঁদনী এক নজরে তাকিয়ে আছে শ্রাবনের দিকে। আর মনে মনে ভাবছে এতটা সুন্দরও কোনো ছেলে হয়। মাথার সব দুষ্টু বুদ্ধি যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে চাঁদনীর। শ্রাবন যে ওর দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে আছে সেদিকে কোনো খেয়ালই নাই ওর। তাই বাদ্ধ হয়ে শ্রাবন চাঁদনীর মুখের সামনে চুটকি বাজিয়ে বললো
— এই মেয়ে তুমি কি করছিলে এটা? আমার গায়ে পানি ছুড়ে মারছিলে কেনো?
শ্রাবনের কথা শুনে যেনো হুশ ফেরে চাঁদনীর। হুশ হতেই চাঁদনী বলে ওঠে
— ঐ মিঞা আপনার কাছে কোনো প্রমান আছে যে আমি পানি আপনার গায়ে মারছিলাম। আমি তো এইখানটায় পানি দিয়ে একটু ভিজাচ্ছিলাম। বেচারা মাটি কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে পানি না খেতে পেয়ে তাই।
— স্টুপিড মেয়ে একটা, তুমি জানোও না আমার সাথে ফাজলামো করার ফল তোমার জন্যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
শ্রাবনের কথা শুনে রাগ উঠে গেলো চাঁদনীর। চাঁদনী কোমড়ে হাত রেখে উচু হয়ে দাড়িয়ে শ্রাবনের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো
— আব্বে ঐ শ্রাবইন্না, কি করবেন কি আপনি আমার? আপনি জানেন আমি কে? কলেজের সবার কাছে জিগ্যেস করে দেখেন সবাই আমায় চেনে। ইচ্ছা করলে এইখানে এখনি আপনাকে আমি জ্বালিয়ে মারতে পারি। আমার সাথে ঝগড়া করতে আসলে ঝগড়া করা ভুলে যাবেন। আপনি আমার প্রান বাচিয়েছিলেন তাই মাফ করে দিলাম এবারের মত যান যান।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো চাঁদনী। শ্রাবন কিছু বলবে তখনি হালকা বাতাস এসে চাঁদনীর গায়ের ঘ্রান গিয়ে লাগলো শ্রাবনের নাকে। সাথে সাথে শ্রাবন চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিশ্বাস নিলো। তারপর চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে রাগি লুক নিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে সেখান থেকে দ্রুতো চলে গেলো।
শ্রাবনের এমন আচরনের কারন কিছুই বুঝতে পারছে না চাঁদনী। তবে প্রথম দেখাতেই শ্রাবনকে ওর ভাললেগে গেছে এটা ও বুঝতে পেরেছে। আর চাঁদনীর কাছে ভালো লেগেছে মানেই হলো শ্রাবনকে এখন জ্বালাতন করে মারবে ও। কথাগুলো ভাবতেই দুষ্টুমি হাসলো চাঁদনী। তারপর হাতের বালতিটা রেখে দাঁত দিয়ে নক খেতে খেতে ক্লাসে চলে গেলো।
সকালে কলেজে আসার পর থেকেই চাঁদনী প্ল্যান করে ছিলো ওকে ইগনোর করার ফল হিসাবে ও শ্রাবনকে গোবর পানিতে চুবানি খাওয়াবে। কিন্তু শ্রাবন ওকে বাচিয়েছিলো তাই গোবর পানির বদলে নরমাল পানিতে চুবানোর প্ল্যান করে চাঁদনী। মিতু আর শ্রাবনী চাঁদনীর কথায় রাজি না হওয়ায় ও ক্লাসে না গিয়ে একাই অপেক্ষা করতে থাকে শ্রাবনের জন্যে। তারপরেই ঘটে ওপরের ঘটনাটা।
,
,
ক্লাসে গিয়ে স্যারকে বলে ভিতরে গিয়ে মিতু আর শ্রাবনীর পাশে বসলো চাঁদনী। পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় আর বড় লোকের মেয়ে হওয়ায় স্যার ম্যাডামরা একটু বেশিই ভালবাসে চাঁদনীকে আর ছাড়টাও দেয় বেশি।চাঁদনী গিয়ে বসতেই শ্রাবনী বলে উঠলো
— ঐ দুষ্টুপাখি কি করলি রে এতক্ষণ, শ্রাবনের ওপর পানি ফেলতে পেরেছিস?
শ্রাবনীর কথা শুনে আনমনে চাঁদনী বলে ওঠে
— পানি তো ফেলতে পারিনি কিন্তু আমি তো পরে গেছি ঐ শ্রাবইন্নার প্রেমে।
চাঁদনীর কথা শুনে মিতু আর শ্রাবনী দুজনেই অবাক হয়ে একসাথে বলে ওঠে
— ওয়াট,,,,,
মিতু আর শ্রাবনীর কথায় ধ্যান ভাঙে চাঁদনীর। আর তখনি চাঁদনী জিব্বায় কামড় দিয়ে বলে
— ইয়ে মানে আমি আসলে বলতে চাইছিলাম যে পানি ফেলতে পারিনি ওনার গায়ে এই আর কি।
— হ্যা হ্যা আমাদের যা বোঝার আমরা বুঝে নিয়েছি। তোকে আর নতুন করে বলতে হবে না। কিন্তু আমরা একটা কথাই বিশ্বাস করতে পারছি না যে তুই, মানে এই কলেজের সকল ছেলে যার সাথে লাইন করার জন্যে পাগল মিস দুষ্টুপাখি। সে কিনা ঐ শ্রাবনের প্রেমে পড়লো? বলি ঐ শ্রাবনের মাঝে তুই এমন কি দেখলি রে (বললো মিতু)
মিতুর কথা শুনে রাগি লুক নিয়ে চাঁদনী বললো
— আব্বে শাঁকচুন্নির দল তোদের কে বললো যে আমি ঐ শ্রাবইন্নার প্রেমে পরছি? আমার তো মনে হয় উনিই আমার প্রেমে পড়ছেন।
কথাটা বলেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো চাঁদনী।চাঁদনীকে লজ্জা পেতে দেখে শ্রাবনী বলে উঠলো
— ওরে আল্লাহ, এই ফাজিল ছেমড়ির হইলো কি রে আজ। ও আবার লজ্জা পায়? যে মেয়ে কিনা সারাদিন সকলকে তার দুষ্টুমিতে জ্বালিয়ে মারে সে কিনা লজ্জা পাচ্ছে? এইটাও দেখার বাকি ছিলো? ও শ্রাবন ভাইরে আপনি ধন্য,,
শ্রাবনীর কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো মিতু। আর চাঁদনী রাগে ফোসফোস করতে করতে শ্রাবনীর চুল টেনে ধরে বললো
— কুত্তি হারামি তুই কি বললি আমায়। আজকে তোকে আমি আলু ভর্তা বানিয়ে খাবো দাড়া।
কথাটা বলেই ক্লাসের মদ্ধে একপ্রকার মারামারি শুরু করে দিলো চাঁদনী আর শ্রাবনী। আর বেচারি মিতু ব্যাস্ত হয়ে পরলো ওদের থামাতে। ক্লাসের স্যার বিষয়টা খেয়াল করার সাথে সাথে বললো
— চাঁদনী কি হচ্ছে টা কি ক্লাসের মধ্যে? এটা কি ক্লাস নাকি তোমাদের মারামারি করার জায়গা? বের হও আমার ক্লাস থেকে আর বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকো যাও।
স্যারের কথা শুনে তিন বান্ধবী চুপষে গিয়ে এক সাথে বললো
— সরি স্যার,,,,,
— কোনো সরি নয়, দিন দিন তোমাদের ফাজলামি বেরেই চলেছে এমন হলে আমি তোমাদের গার্জিয়ানদের জানাতে বাদ্ধ হবো। এখন যাও তিনজন মিলে বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকো। এটাই তোমাদের শাস্তি।
স্যারের কথা শুনে গাল ফুলিয়ে তিনজনে বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো। ক্লাসের সবাই ওদের অবস্থা দেখে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। স্যার সবাইকে ধমক দিয়ে থামিয়ে ক্লাস নেওয়া শুরু করলো। বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে মিতু অসহায় গলায় বললো
— শাঁকচুন্নির দল তোদের দুজনের জন্যে আমাকেও বেকার শাস্তি পেতে হলো। তোরা কি একটুও চুপ থাকতে পারিস না?
মিতুর কথা শুনে শ্রাবনী আর চাঁদনী একসাথে রাগি গলায় বলে উঠলো
— না পারি না, আর আমরা যখন শাস্তি পেয়েছি তোকেও পেতে হবে। কারন তুই আমাদের বেষ্টু। তাই সবাই এক সাথে শাস্তি নিমু বুঝলি।
এভাবে কথা কাটাকাটি করতে করতে আবারও তিনজনের মাঝে ঝগড়া লেগে গেলো। ওদের ঝগড়া শুনে ক্লাসে স্যার বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে এসে বললো
— এই থামো তোমরা বলছি থামো। আর তিনজনেই কান ধরে দাড়িয়ে থাকো। ক্লাস থেকে আর একবার যদি তোমাদের কথা শুনতে পাই আমি তাহলে তিনজনকেই রোদের মধ্যে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখবো আর গার্জিয়ানদের নিয়ে এসে বিচার দিবো। কান ধরো সবাই।
স্যারের ধমক খেয়ে ভয়ে তিন বান্ধবী কান ধরে দাড়িয়ে রইলো। স্যার ক্লাসে চলে যাওয়ার সাথে সাথে চাঁদনী বললো
— ব্যাটা ভুঁড়িওয়ালা টাকলু স্যার। চাঁদনীকে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখলি। তোর বউ তরে জীবনেও রান্না করে খাওয়াবে না দেখে নিস। প্রতিদিন বউয়ের পা টিপতে হবে তোর। সারাদিন তোর বউ তোকে খাটিয়ে মারবে। আমার প্রেস্টিজ পাংচার করে দিলো রে এ্যা এ্যা এ্যা
চাঁদনীর কথা শুনে হা হা করে হেসে দিলো মিতু আর শ্রাবনী।
একটু পর ওদের সামনে দিয়ে শ্রাবন হেটে যাওয়ার সময় ওদের কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে শব্দ করে হেসে দিলো। তারপর চাঁদনীকে শুনিয়ে বললো
— স্যার আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ,আজকে একটা কাজের মতো কাজ করেছেন।
শ্রাবনের কথা শুনে রাগে ফোসফোস করে চাঁদনী বললো
— বজ্জাত শ্রাবইন্না তুই যে দাঁত কেলিয়ে হাসছিস তোর সেই দাঁত একটাও থাকবে না। সব গুলো পরে গিয়ে বুড়ো হয়ে যাবি তুই। তোর কপালে বউ নয় ডাইনি জুটবে ডাইনি। মিলিয়ে নিস আমার কথা।
কথাগুলো বলছে আর রাগে কটমট করছে চাঁদনী। ওর কথা শুনে শ্রাবনী আর মিতু মুখ টিপে হাসছে। আর শ্রাবন রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে কিছু একটা বলে চলে গেলো।
আজকে আর ক্লাস করা হলো না কারো। সারাক্ষণ দাড়িয়ে থেকেই কেটে গেলো কলেজ টাইম। কলেজ শেষে গাল ফুলিয়ে বাসায় চলে গেলো চাঁদনী।
বাসায় যেতেই বাবাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরলো চাঁদনী। তারপর বললো
— ওও আব্বু তুমি কখন এসেছো? কেমন আছো তুমি?
— এই তো মামনি আমি ভালো আছি। তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম এতক্ষণ। আমায় আবারও ব্যাবসার কাজে আজকেই চলে যেতে হবে।
বাবার চলে যাওয়ার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো চাঁদনীর। চাঁদনী গাল ফুলিয়ে বললো
— তুমি খুব পঁচা আব্বু সব সময় আমায় ছেড়ে দুরে থাকো। আমার বুঝি কষ্ট হয়না?
— মন খারাপ করেনা মামনি। আমি তো তোমাদের জন্যেই এত কাজে ব্যাস্ত থাকি। আচ্ছা শোনো যে কারনে আজকে এসেছি।
এতটুকু বলতেই পাশের রুম থেকে চাঁদনীর মা এসে উত্তেজিত হয়ে বললো
— চাঁদের আব্বু আর চাঁদ জলদি এসো দেখে যাও নিউজে কি দেখাচ্ছে।
চাঁদনীর মায়ের কথায় কেউ আর কিছু না বলে নিউজ দেখতে চলে গেলো। আর নিউজটা দেখে রিতিমত ভয় পেয়ে গেলো সবাই। কারন নিউজে দেখাচ্ছে গত কয়েক দিনে সিলেটের বেশ কয়েকটা জায়গায় মানুষ ও হিংশ্র প্রানীর রক্তশুন্য লাশ। যার মৃত্যুর সঠিক কারন কেউ এখনো বলতে পারছে না।প্রতিদিন রাতে কোথাও না কোথাও মারা যাচ্ছে এভাবে রহস্যময় ভাবে মানুষ।
নিউজটা দেখেই চাঁদনীর বাবা বলে উঠলো
— আমি তোমাদের এই কথাটা বলার জন্যেই এসেছি। আমি যত তারাতারি সম্ভব কাজ শেষ করে ফিরে আসবো বাসায়। কিন্তু ততদিন তোমরা সন্ধা হওয়ার সাথে সাথে দরজা জানালা ভালো করে লাগিয়ে বাসার ভিতরে থাকবে। ভুল করেও বাইরে যাবে না। কারন এই মৃত্যুর কারন সকলেরই অজানা। বুঝতে পেরেছো?
চাঁদনীর বাবার কথায় চাঁদনী আর ওর মা দুজনেই সায় দিলো।
,
,
রাত ২.২০ মিনিট
চাঁদনী নিজের টেডিবিয়ারটাকে জরিয়ে ধরে বিভরে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ চাঁদনীর রুমের জানালার কাঁচটা একাই খুলে গেলো। আর রুমের মাঝে শো শো শব্দে ঠান্না হাওয়া ঢুকতে লাগলো। সাথে করে ঢুকলো হুডিওয়ালা কালো জ্যাকেট পড়া একটি লম্বা করে লোক। রুমে ঢুকেই হাওয়ার বেগে চাঁদনীর পাশে এসে দাঁড়ালো সে। বাতাসে চাঁদনীর শরীরের ঘ্রান এসে আছড়ে পরছে লোকটার নাকে। চাঁদনীর শরীরের ঘ্রান যেনো নেশাগ্রস্ত করে দিচ্ছে লোকটাকে। চাঁদনীকে দেখে যেনো লোভ সামলে রাখতে পারছে না সে। রক্তের পিপাশা জেকে বসেছে মনে।
লোকটা ধিরে ধিরে চাঁদনীর পাশে গিয়ে বসলো। তারপর মুখে ফুটিয়ে তুললো রহস্যময় হাসি। লাল টকটকে চোখ দুটো সামনে শিকারকে পেয়ে যেনো চকচক করে উঠেছে। ঠোট ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে এসেছে শুচালো চিকন লম্বা দাঁত। আর সেই দাঁত নিয়ে লোকটা এগিয়ে গেলো চাঁদনীর গলার কাছে,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চাঁদনীকে কি রক্ত খেয়ে মেরে ফেলবে আজ এই ভ্যাম্পায়ারটা?